ব্যাংক ও ব্যবসায়ীরা নিজের ভবিষ্যতই চুরি করছেন
‘আমদানি কমালে ডলার বাঁচবে, রপ্তানি বাঁচবে কি?’ এটা ছিল ২৫ জুলাই ২০২২ আমার প্রথম আলোর মতামত কলামের শিরোনাম। বাস্তবে জোরজবরদস্তি করে আমদানি কমানো হয়েছে, কিন্তু তাতে ডলার রিজার্ভ বাঁচানো যায়নি। ডলার-সংকটে ঋণপত্র নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক দেড় বছরে সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছেড়েছে, এতে রিজার্ভ কমেছে। পাচার বেড়েছে বলে ডলার-সংকট তীব্র। আগে সাধারণত ঘুষ-তদবির-জাত কালোটাকা, প্রকল্পের চুরি করা টাকা, চাঁদাবাজির টাকা, খেলাপি ঋণের টাকা পাচার হতো। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শত শত বেনামি ঋণের নামে ব্যাংকের অর্থ লোপাট করে পাচারের আয়োজন।
নভেম্বর মাসের মাত্র দুই সপ্তাহে তিন ইসলামি ধারার ব্যাংক থেকে বেনামে ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা ঋণ গেছে, যেখানে গ্রহীতাদের ঠিকানাই নেই। শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস ছেলে কোম্পানি গঠনের ১৪ দিনের মাথায় ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছে ৯০০ কোটি টাকা। জামানতের প্রয়োজন হয়নি, লাগেনি কোনো ক্রেডিট রিপোর্ট। কোম্পানির ঠিকানায় কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়নি। নথিপত্রে মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা টেলিফোন নম্বরও নেই। এমন তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ৯০০ করে মোট ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে ইসলামী ব্যাংক থেকে। ছয় বছরে প্রতিবছর গড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হলেও গত এক বছরেই ঋণ দেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। এ ধরনের ঋণের অর্থ পাচার হচ্ছে বলে অর্থনীতিবিদদের ধারণা।
ডলার–সংকটের কারণে সরকার আমদানি নিরুৎসাহিত করতে চেয়েছে, কিন্তু কোন এলসি বন্ধ হবে, কোনটা চালু থাকবে, সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট ও কার্যকর নীতিমালা নেই। এতে ব্যবসায় বৈষম্য তৈরি হয়েছে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের এলসি বন্ধ হয়েছে, কিন্তু প্রভাবশালীরা অনেকেই এলসি খুলতে পারছেন। ফলে ব্যাংকিং খাতে পাচার কমেনি। ঘটনা যা-ই হোক, এলসি তথ্যগুলো ভবিষ্যতের জন্য অনেক ট্রেস বা চিহ্ন রেখে যাচ্ছে।
রিজার্ভ থেকে প্রকল্পে ও রপ্তানি খাতের দেওয়া রাজনৈতিক ঋণও পাচার হয়েছে। আজকের ডলার–সংকটের জন্য মেধাহীন অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত অথবা পাচারের অনুকূল ইচ্ছাকৃত নীতি—কোনোটাই কম দায়ী নয়। যা বলছিলাম, আমদানি কমাতে গিয়ে রপ্তানিও কমতে শুরু করেছে। ডলার-সংকট তীব্র হয়েছে। যেহেতু আমাদের রপ্তানি ও ব্যবসা আমদানিমুখী, সেহেতু এটাই হওয়ার কথা ছিল। এতে আমদানি ও রপ্তানিকারকেরা হতাশ হয়ে এমন সব পথ নিচ্ছেন, যা কিনা মানি লন্ডারিং বাড়াতে উৎসাহ দেয়। এতে ভবিষ্যৎ ইলেকট্রনিকস বাণিজ্যের সম্ভাবনা উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে কিছু কৌশলগত বিপদ তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ, চুরি, পাচার ও অপচর্চাগুলো চিহ্ন বা ট্রেস রেখে যাচ্ছে।