বাংলাদেশের অভ্যুদয় নিয়ে পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়নি
গত ২৩ নভেম্বর পাকিস্তানের বিদায়ি সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া বলেছেন, পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) হাতছাড়া হওয়ার পেছনে সামরিক নয়, রাজনৈতিক ব্যর্থতা ছিল। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে বলেন, সেসময় পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩৪ হাজার মূল সেনাসদস্য নিয়োজিত ছিল, ৯২ হাজার নয়। ৩৪ হাজার সেনাসদস্যের অতিরিক্ত যারা ছিল তারা হলো প্যারা মিলিটারি ফোর্স ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের লোকজন। তার কথায়-‘পাকিস্তানি এ ৩৪ হাজার সেনাসদস্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর আড়াই লাখ সেনা ও মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষিত ২ লাখ যোদ্ধার বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে পাকিস্তানি সেনাসদস্যরা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন এবং নজিরবিহীন ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন, অথচ তাদের সেই ত্যাগ দেশে কোনো স্বীকৃতি পায়নি, যা ত্যাগ স্বীকার করা সেনাসদস্যদের প্রতি চরম অন্যায়।’ জেনারেল বাজওয়া বিভিন্ন সময় সেদেশের
রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন এবং এ ধরনের হস্তক্ষেপকে তিনি ‘অসাংবিধানিক’ বলেও মন্তব্য করেন। জেনারেল বাজওয়া সম্ভবত প্রথম কোনো পাকিস্তানি সেনাপ্রধান, যিনি তার দেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে স্বীকার করে নিলেন।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর দেশটিতে তিন তিনবার সফল সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান, ১৯৭৭ সালে জেনারেল জিয়াউল হক ও ১৯৮৯ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফের নেতৃত্বে এসব সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এ তিন সামরিক কর্মকর্তাই অভ্যুত্থান-উত্তর প্রেসিডেন্ট হিসাবে দেশটিকে শাসন করে গেছেন। সেদেশে যে দলই শাসনক্ষমতায় আসুক, তাদের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আপস করেই দেশ চালাতে হয়।