চে গুয়েভারা, আলবেয়ার কামু ও ফুটবল
ফুটবল নিয়ে যে কেবল সাধারণ মানুষজনই মাথা ঘামায়, সাধারণেরাই ফুটবল খেলার চেষ্টা করে, তা কিন্তু নয়। জগতে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি আছেন, যারা ফুটবল ভালোবেসেছেন। ফুটবল খেলেছেন। এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোচিত নামটি হচ্ছে চে গুয়েভারা। চে গুয়েভারার নাম শুনলেই আমাদের চোখে ভাসে একজন রোমান্টিক-বিপ্লবীর অবয়ব। ১৯৬৭ সালে তাকে হত্যা করা হয়, কিন্তু দশকের পর দশকজুড়ে চে হয়ে রয়েছেন তারুণ্যের প্রতীক। যে তরুণ স্বপ্ন দেখে, যে তরুণ সবার জন্য সমান একটি পৃথিবীকে আলিঙ্গন করতে চায়, তার সবচেয়ে বড় অবলম্বন চে। প্রকৃত নাম এর্নেস্তো রাফায়েল গুয়েভারা দে লা সের্না। তবে, শুধু ‘চে’ নামেই তাকে চেনে গোটা দুনিয়া। আর্জেন্টিনার মানুষ। ছিলেন ডাক্তার। ভালোবাসতেন কবিতা শুনতে ও লিখতে। তিনি একই সঙ্গে ডাক্তার, লেখক, ভ্রমণপিপাসু, রাগবি, ফুটবল, দাবা খেলার ভক্ত, এবং বিপ্লবী। ছাত্রাবস্থায় মোটরসাইকেলে লাতিন আমেরিকা ভ্রমণকালে সেখানকার দারিদ্র্য তাকে ভীষণভাবে নাড়িয়ে দেয়। তার তরুণ মন এর জন্য একচেটিয়া পুঁজিবাদকে দায়ী করে।
সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় বিশ্বাসী চে এরপর গুয়েতেমালায় সামাজিক সংস্কার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। তারপর ফিদেল ক্যাস্ত্রোর সংস্পর্শে এসে কিউবার বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দেন। কিউবার অত্যাচারী বাতিস্তা সরকারের সঙ্গে প্রায় দু’বছরের সংগ্রামের পর সেই সরকারের পতন হয়। ১৯৬১ সালে ফিদেল ক্যাস্ত্রো চে গুয়েভারাকে শিল্পমন্ত্রী করেন। কিউবার রাষ্ট্রদূত হিসেবে বিভিন্ন দেশে যান। ১৯৬৫ সালে ক্যাস্ত্রো জানান, কিউবা ছেড়েছেন চে। ক্ষমতার আস্ফালন দেখানোর ব্যাপারে পুঁজিবাদী আমেরিকা বা সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া, চীন সবারই নীতি এক। রাজনৈতিক দলমতনির্বিশেষে ক্ষমতা ছাড়তে সবারই আপত্তি সমান। এইখানেই চে স্বতন্ত্র। ১৯৬৫ সালে কিউবা ত্যাগ করে তিনি আফ্রিকার কঙ্গোয় যান বিপ্লব সংগঠনের উদ্দেশ্যে। তারপর বলিভিয়া। সিআইএর সাহায্যপুষ্ট বলিভিয়ার সেনার হাতে চে বন্দি ও নিহত হন ১৯৬৭ সালে। সারা বিশ্বে বিপ্লবপিপাসুদের মহানায়ক চে গুয়েভারা যৌবনে ফুটবল খেলতেন, ফুটবল ভালোবাসতেন মনেপ্রাণে। ১৮ মে, ১৯৬৩। হাভানায় খেলতে আসা ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওর শহরতলির ছোট ক্লাব মাদুরিয়েরা স্পোর্তে’র শেষ ম্যাচ। খেলা দেখতে হাজির চে। তিনি তখন কিউবার শিল্পমন্ত্রী। ১৯৫৮’র সুইডেন, ১৯৬২’র চিলির বিশ্বকাপে পেলে, গারিঞ্চার ব্রাজিলকে নিয়ে তখন তুমুল উন্মাদনা। স্টেডিয়ামে না এসে পারেননি ‘কমানদান্তে’। স্টেডিয়ামে বসে দেখেন পুরো খেলা। মাদুরিয়েরা সেই ম্যাচ ৩-২ গোলে জেতে। খেলা শেষে চে খেলোয়াড়দের সঙ্গে মিলিত হন। শুভেচ্ছা জানান। আসলে চে নিজেও ছিলেন ফুটবল-পাগল। রাগবি খেললেও ছেলেবেলায় ফুটবলই ছিল ভালোবাসা।