এনআইডি হতে পারে রাজনৈতিক হাতিয়ার
গত বছরের ২৪ মে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০১০ সংশোধনের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পরিবর্তে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগে হস্তান্তরের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছিল। সে সময়ে আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। অনেকেই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এটি সরকার নিজের হাতে নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই নির্বাচন কমিশন থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিতে সরকার তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠানকে দেশের সরকার এ রকম নির্দেশনা দিতে পারে কিনা? সোজা কথায়, এটি কমিশনের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হামলা। আমাদের দেশে ভোটার ডাটাবেজ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি হয়েছে, অন্য দেশে বিষয়টি উল্টো।
এখন জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ভোটার ডাটাবেজ যদি সরকারের নিয়ন্ত্রণে যায়, সরকার চাইলে বিভিন্ন রকম কারসাজির মাধ্যমে যে কাউকে ভোটার করতে পারে এবং যে কাউকে বাদও দিতে পারে। এতে করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের একটি সুযোগ থেকে যায়, দুর্নীতিরও সুযোগ তৈরি হয়। ছবিসহ ভোটার তালিকা আমাদের গর্বের ধন, এটিতে কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না। এখন সরকারের কী পরিকল্পনা আছে তা জানা সম্ভব নয়। সরকার চাইলে জন্মনিবন্ধন থেকেও শুরু করতে পারে।
আগেই উল্লেখ করেছি, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সংবিধানের ১১৮ (৪) অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন। কমিশনকে সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠার কারণ হলো- যাতে প্রতিষ্ঠানটি এর ওপর সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদে অর্পিত দায়িত্বগুলো প্রভাবমুক্ত হয়ে সঠিকভাবে সম্পাদন করতে পারে, যার মধ্যে 'সংসদের নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুত' অন্যতম।
এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ে গেলে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা হুমকির মধ্যে পড়বে। কারণ এনআইডি তথা ভোটার তালিকা তাদের কাছে থাকলে তারা এটিকে বিভিন্নভাবে ম্যানুপুলেট করতে পারে- এমন সন্দেহ তৈরি হওয়া অমূলক নয়। সবদিক থেকেই এটি ভয়ানক হবে। আমরা দেখতে পাই, আমাদের দেশে সবকিছুই ভেঙে পড়ছে এবং সবকিছুই কারসাজির শিকার হচ্ছে। আমরা এখানে পাসপোর্টের দিকে দেখতে পারি। তারা পাসপোর্টের মতো আলাদাভাবে করতে চাইলে করুক। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের সার্ভারগুলো যেন তাদের আয়ত্তে না নেয়।