বুধবার ভরদুপুরে সর্বার্থেই চমক হয়ে এসেছিল 'ভোট বন্ধ' হওয়ার খবর। এর আগে কখনও এভাবে গোটা আসনে 'ভোট বন্ধ' হয়েছিল? নাতিদীর্ঘ স্মৃতি হাতড়ে তার জবাব মেলে না। কখনও কখনও মাত্র কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত হওয়ার কথা মনে পড়ে বৈকি। কয়েক দিন পর সেসব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের পর ফলাফল প্রকাশ হলেও পরিস্থিতি উনিশ-বিশ মাত্র। এই তো!
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে ভোটের দিন সকাল পর্যন্তও ওই সংসদীয় এলাকার বাইরে খুব আগ্রহ ছিল বলে মনে হয় না। বরং খানিকটা কৌতূহল ছিল সম্ভবত ১৪৫টি ভোটকেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ১২শ সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের রেকর্ড নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ট্রল মাস্টাররা হয়তো কি-প্যাডে আঙুল দিয়েই বসে ছিল সিসিটিভি-বেষ্টিত ভোটের ফলাফলের অপেক্ষায়।
বস্তুত সাম্প্রতিক বছরগুলোর জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচনগুলোর একটি 'প্যাটার্ন' দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। বিএনপির নির্বাচন বর্জন; ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রশাসনের পক্ষপাত নিয়ে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর অভিযোগ; ইভিএমের ব্যাপারে ভোটারের শঙ্কা ও নাগরিক সমাজের প্রশ্ন; ভোটগ্রহণে অনিয়ম ও জালিয়াতি দেখেও নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ততা- এর বাইরে বিশেষ কিছু ঘটত না। ষোল আনা আশঙ্কা ছিল- গাইবান্ধার উপনির্বাচনেও পরিস্থিত থাকবে তথৈবচ। কিন্তু সকাল গড়াতেই যখন নির্বাচন কমিশন একের পর এক কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করতে করতে সংখ্যাটিকে প্রায় অর্ধশতে নিয়ে যায়, তখন সবাই যেন নড়েচড়ে বসে।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি-সাঘাটা উপজেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো সংযুক্ত ছিল ঢাকার নির্বাচন ভবনে স্থাপিত পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সঙ্গে। সেখান থেকে নির্বাচন কমিশনের শীর্ষ ব্যক্তিরা সরাসরি দেখতে পান বিভিন্ন গোপন কক্ষে অবৈধভাবে একাধিক ব্যক্তি অনুপ্রবেশ করছে; একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দিচ্ছে। বেলা সোয়া ২টার দিকে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সামনে এসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন- 'নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ায় আমরা পরিশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সমগ্র নির্বাচনী এলাকা, গাইবান্ধা-৫ নির্বাচনী এলাকার ভোট কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি।'
প্রশ্ন হচ্ছে, গাইবান্ধা-৫ আসনের এই উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার তাৎপর্য কী? গত জুলাই মাসে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার প্রয়াণের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদের শেষার্ধে আয়োজিত অনেকটা নিয়ম রক্ষার এই নির্বাচন রাজনৈতিকভাবেও খুব একটা তাৎপর্যপূর্ণ ছিল না। তারপরও এমন নজিরবিহীন পরিস্থিতির নেপথ্যের কারণ কী? আমার ক্ষুদ্র পর্যবেক্ষণমতে এর মধ্য দিয়ে আগামী দিনের জন্য অন্তত তিনটি তাৎপর্য থাকতে পারে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- উপ-নির্বাচন
- ভোট কারচুপি
- নির্বাচন বন্ধ