মামলাজটে ন্যুব্জ শিক্ষা প্রশাসন
শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মামলার সংখ্যা এখনই সাড়ে ৮ হাজারের বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দপ্তরগুলোর কাছ থেকে ‘যথাযথ’ সমাধান না পেয়ে ভুক্তভোগীরা মামলা করেন। আবার বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত আটকে দেওয়ার জন্যও কেউ কেউ মামলার আশ্রয় নেন। মামলার দীর্ঘসূত্রতা থেকে ফায়দা লোটারও চেষ্টা করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক দপ্তর ও কর্মকর্তা মামলা সামাল দিতে ব্যস্ত। মামলার জন্য অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত আটকে যাচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দপ্তরের কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসছে।
মামলার কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আটকে যাওয়ার উদাহরণ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য ইউজিসির তদন্তে বেরিয়ে আসে। পরে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিলে তিনি উচ্চ আদালতে মামলা করে তা স্থগিত করেন। মামলার কারণে পরিকল্পনামাফিক অনেক কাজ শেষ করা যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত মামলার কারণে আটকে যাচ্ছে।
আবার ভিন্ন চিত্রও আছে। এমপিওর মাধ্যমে মাসিক বেতনের বকেয়া টাকা পেতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে (মাউশি) আবেদন করেন রাজশাহীর আলীপুর মডেল কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীরা। কাজ না হওয়ায় তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত শিক্ষক ও কর্মচারীদের পক্ষে রায় দেন। সেই রায় বাস্তবায়ন না করায় আদালত অবমাননার মামলা হয় মাউশির বিরুদ্ধে। সেই মামলায়ও মাউশির বিপক্ষে রায় হয়। এভাবে মামলা হচ্ছে। কোনো কোনোটির নিষ্পন্ন হচ্ছে। আর অনিষ্পন্ন মামলার সারি হচ্ছে দীর্ঘ।
কেন দিন দিন মামলার সংখ্যা বাড়ছে—এমন প্রশ্নে সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতরা সেবা দিতে যত্নবান নন। ফলে দিন দিন মামলা বাড়ছে। এ ছাড়া ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যথাযথ সমাধান পান না বলেই মামলা করেন। কেউ কেউ আবার উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলা করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আটকে দেন।
দেশের পুরো শিক্ষাব্যবস্থা দেখভাল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভাগ রয়েছে দুটি। একটি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, অন্যটি কারিগরি ও মাদ্রাসাশিক্ষা বিভাগ। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতাধীন দপ্তর ১০টি আর শিক্ষা বোর্ড ৯টি। কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের অধীন দপ্তর রয়েছে ৬টি। অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর ৫টি।
মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার সর্বশেষ প্রতিবেদন (আগস্ট মাসের) থেকে জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতাধীন দপ্তরের অনিষ্পন্ন মামলা ৪ হাজার ২৬১টি, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের ১ হাজার ৩৭৮টি। আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তরগুলোর অনিষ্পন্ন মামলা ৩ হাজার ৩৯টি। এই হিসাবে শিক্ষা প্রশাসনে চলমান মামলার সংখ্যা ৮ হাজার ৬৭৮টি।
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- শিক্ষা প্রশাসন
- মামলাজট