পয়সা উসুল শামসের আলীর ভুনা খিচুড়িতে!
মন-প্রাণ উজাড় করে রান্না করলাম বিখ্যাত সব ঢাকাইয়া খাবার নুইনার শাক দিয়ে গরুর গোস্ত, আনারস, পাকা আমড়া ইত্যাদি দিয়ে গরুর গোস্তের নানা পদ। সাথে ছিল খিচুড়িও। এরপর কয়েকদিন বেশ ভয়ে ভয়েই ছিলাম, কি জানি কি আছে কপালে! একদিন ডিসি স্যার তার অফিসে ডেকে বললেন- 'আরে শামসের মিয়া আপনি তো কামাল করে দিলেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আপনার হাতের রান্না তৃপ্তি সহকারে খেয়েছেন।'
চাল, ডাল, মশলাসহ যাবতীয় জিনিস একত্রে দিয়ে অদ্ভুত এক খাবার তৈরির প্রক্রিয়া আয়ত্ত করেছে উপমহাদেশের লোকেরা। সেই খাবারের নাম দেওয়া হলো খিচুড়ি। এই খিচুড়িই এ অঞ্চলের মানুষের– বাঙালি কিংবা ভারতীয়–কাছে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অবস্থা এমন যে— একদল লোক বৃষ্টিভেজা রাত কিংবা দুপুরের খাবার হিসেবে খিচুড়ির তুলনা অন্য কিছুর সাথে করতেই নারাজ। তাই তো বৃষ্টি এলেই প্রায় বাসার উনুনেই ওঠে খিচুড়ির হাঁড়ি। যাদের বাসায় রান্না হয় না, তারাও বেরিয়ে যান খিচুড়ির খোঁজে।
খিচুড়ির সাথে বাঙালির এই সখ্যতার পেছনের রহস্য খুঁজতে গিয়ে দেখি এর ইতিহাস বেশ পুরোনো। ধারণা করা হয়, মোটামুটি ১২০০ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যবর্তী কোন এক সময়ে এ এলাকায় খিচুড়ির আবির্ভাব ঘটে।
হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'বঙ্গীয় শব্দকোষ' বলছে প্রাকৃত শব্দ 'কিস' বা 'কৃসরা' থেকে ক্রমান্বয়ে খিচরি (রী/ডি/ড়ী) হয়ে আজকের অপভ্রংশ এই খিচুড়ি শব্দের বিবর্তন। গ্রিক সম্রাট সেলুকাস ভারত আক্রমণের সময় 'খিসরি' নামে এক প্রকারের খাবারের উল্লেখ করেন যেটি চাল ও ডাল সহযোগে তৈরি করা হতো।
যাইহোক, আগেকার দিনে উচ্চবিত্ত লোকজন আহারের শেষের দিকে ডালের স্বাদ নিতেন। মাছ সহজলভ্য হওয়ায় গরিবকে ডালের মুখাপেক্ষী থাকতে হত না। অবশ্য মঙ্গল কাব্যের সময় থেকে সাহিত্যে ডালের উল্লেখ পাওয়া গেলেও নীহাররঞ্জন রায় তার বাঙ্গালীর ইতিহাস গ্রন্থে লিখেছেন, 'প্রাচীন বাঙালীর খাদ্য তালিকায় ডালের উল্লেখ কোথাও দেখিতেছি না।'
- ট্যাগ:
- লাইফ
- ইতিহাস
- ভুনা খিচুড়ি
- খিচুড়ি