ভবিষ্যতের জন্য নতুন রাষ্ট্রচিন্তা ও রাজনীতিতে গুরুত্ব দিতে হবে
‘ইউনাইটেড নেশনস অর্গানাইজেশন’ কার্যক্ষেত্রে অবশ্যই ‘ইউনাইটেড স্টেটস অর্গানাইজেশন’। এ সংস্থার নাম ইউনাইটেড স্টেটস অর্গানাইজেশনই হওয়া উচিত ছিল। রাষ্ট্রকে অবশ্যই আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ রাষ্ট্রগুলো নিয়েই এর সব কর্মকাণ্ড।
আর রাষ্ট্রের মধ্যেই জাতি এসে যায়। সংঘের নাম রাষ্ট্র থাকলে পুরো ব্যাপারটাই আরো স্পষ্ট হতো। কলকাতার লেখকরা বাংলায় ‘রাষ্ট্রসংঘ’ কথাটিই ব্যবহার করেন। ইংরেজিতে তাঁরা ইউনাইটেড নেশনস অর্গানাইজেশন বা ইউএনও লিখে থাকেন।
পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলোকে ‘শক্তিমান রাষ্ট্র’ ও ‘দুর্বল রাষ্ট্র’—এভাবে ভাগ করা বা দেখা উচিত। দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর বোঝা উচিত, দুর্বলতার জন্যই দারিদ্র্য দেখা দেয়। দুর্বলতাই মূল। তারা বুঝতে পারত, দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হতে হলে শক্তি অর্জন করতে হবে। সব রকম শক্তি। আজকের পৃথিবীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক শক্তিশালী। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও অনুসারী হয়ে চলছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান প্রভৃতি রাষ্ট্র। ভারত, চীন, রাশিয়াও শক্তিশালী। মনে হয় পশ্চিমা বৃহত্ শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো অন্তত তিন-চার দশক ধরে শক্তি হারিয়ে চলছে। দেখা যায়, তারা নিজেদের মধ্যকার বিরোধ নিজেরা মিটিয়ে ফেলে—বাইরের জগেক জানাতে চায় না। পুরো মানবজাতির ওপর কর্তৃত্ব করা, শোষণ চালানো এবং সব রাষ্ট্রকে নিজেদের ওপর নির্ভরশীল করে রাখার ব্যাপারে তারা একে অন্যের সহযোগী। যুক্তরাষ্ট্র তাদের নেতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে যুক্তরাজ্য ছিল তাদের নেতা। পরে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো চলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত থেকে।
আজকের রাশিয়া ও চীনকে যুক্তরাষ্ট্র তার শত্রু মনে করে। রাশিয়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে যে যুদ্ধ চালাচ্ছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনকে অর্থ দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে, সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চেষ্টা করছেন যুদ্ধ যাতে থেমে না যায় তার জন্য। ইউক্রেনের কোনো স্বাধীন মত নেই। রাশিয়ার দিক থেকে যুদ্ধের কারণ বলা হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধজোট ন্যাটোকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যেভাবে সাজাচ্ছে, তাতে রাশিয়ার নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে আছে। ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করে নিয়ে তাকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করার আয়োজন চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইউক্রেনের জনসাধারণ। পুরো মানবজাতিই নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলছে। যুদ্ধের অবসান দরকার। এ ক্ষেত্রে অবিলম্বে যুদ্ধের কারণগুলো দূর করা দরকার। জাতিসংঘ যেভাবে কাজ করছে, তাতে যুদ্ধ থামছে না, মানুষের জীবন ও বস্তুগত সম্পদ ধ্বংস হয়ে চলছে। যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমা বৃহত্ শক্তিগুলোর অনুকূলে থেকে যে ভূমিকা পালন করছে এবং করে চলছে, তাতে প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধের কারণ ও যুদ্ধ বন্ধ থাকছে না, যুদ্ধ থামছেও না।
বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ও সার্বিয়ার যুদ্ধ চলেছে চার-পাঁচ বছর। সে যুদ্ধ বন্ধ হতে না হতেই সামরিক আক্রমণ ও যুদ্ধ চলেছে আফগানিস্তানে, ইরাকে, লিবিয়ায়, সিরিয়ায়। হত্যা করা হয়েছে সাদ্দাম হোসেন ও গাদ্দাফিকে। এসব যুদ্ধে গত ২০ বছরের মধ্যে প্রায় ২০ লাখ লোক নিহত হয়েছে বলে প্রচারমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। সামনে চীনের সঙ্গেও যুদ্ধ লাগার সমূহ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। প্রচারমাধ্যম মানবজাতির জন্য ভয়াবহ বিপত্তির আশঙ্কা সম্পর্কে নানা কথা বলছে। যুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং শান্তির পক্ষে কোনো আন্দোলন গড়ে উঠছে না। দার্শনিক-বৈজ্ঞানিকরা কি শান্তি প্রতিষ্ঠায় আস্থা হারিয়েছেন?
- ট্যাগ:
- মতামত
- রাজনীতি
- রাষ্ট্রচিন্তা