চা শ্রমিক : যে জীবন দাসত্বের!
চা-শ্রমিকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার, আগের মজুরিতে কাজের সিদ্ধান্ত। ২২ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত চা-বাগানের শ্রমিকদের বৈঠক হয় মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে। সেখানে শ্রমিকেরা প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে আগের মজুরিতে বাগানে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। (ঢাকা পোস্ট, ২২ আগস্ট ২০২২)
চা শ্রমিকেরা একটা আন্দোলনের মধ্যে ছিল বলে এখন আমরা সকলেই খোঁজ খবর পেয়েছি, তারা কত টাকা মজুরি পায়, কী পরিস্থিতিতে তাদের কাজ করতে হয়ে এইসব। দৃশ্যত দেশের বেশিরভাগ মানুষই চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরির দাবিকে সমর্থন করে। আর মালিকপক্ষের দিক থেকে দৈনিক মজুরি পঁচিশ টাকা বৃদ্ধির যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তা তো কার্যকর হয়নি, বরং শ্রমিকদের পক্ষে জনসমর্থন আরও বেড়েছে।
চা শ্রমিকদের এখনকার চলমান কর্মবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে আন্দোলন ব্যাপক প্রচার পায় বটে, কিন্তু আন্দোলন হঠাৎ করে শুরু হয়ে যায়নি। চা শ্রমিকদের প্রতি শোষণ, নির্যাতন, বঞ্চনা সবসময়ই বিদ্যমান ছিল, আর এইরকম একটা আন্দোলনের নৈর্ব্যক্তিক শর্তগুলো অনেক আগে থেকেই বিরাজ করছিল।
ফলত মজুরি বৃদ্ধির দাবি যেমন শ্রমিকদের কাছে অনিবার্য একটি প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে, এই দাবিতে আপসের সুযোগ আর শ্রমিকদের নেই। অপরদিকে এই আন্দোলনে শ্রমিকদের মধ্যে যে নিষ্ঠা, ঐক্য ও সংহতি দেখা গেছে সেটা ভবিষ্যতের জন্যে কেবল চা শ্রমিকই নয় সাধারণভাবে দেশের সকল শ্রমজীবী মানুষের জন্যে প্রেরণায় উৎস হয়ে থাকবে।
চা শ্রমিকদের প্রতি মালিকদের শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস অনেক পুরোনো। বাংলাদেশে এই শিল্পের প্রতিষ্ঠাই হয়েছে শ্রমিকদের প্রতি প্রবল অন্যায় দিয়ে—ঔপনিবেশিক শাসনের সময় আমাদের দেশে চা বাগানগুলোর জন্যে শ্রমিকদের নিয়ে আসা হয়েছিল ভারতের উত্তর প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড এইসব এলাকা থেকে।
চা শ্রমিকদের দূরবর্তী সেইসব এলাকা থেকে নিয়ে আসার প্রক্রিয়াতে ছিল প্রতারণা। চা বাগানের শ্রমিক জোগাড় করার জন্যে ঐসব এলাকায় লোকজন প্রলুব্ধ করা হতো অনেক জমিজমা দেওয়া হবে, মোটা বেতন দেওয়া হয়ে, উন্নত জীবন হবে এইরকম সব কথা বলে।