দল গড়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ
সাকিবকে নিয়ে একটা সময়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছিল বিসিবি। ২০১৯ সালে আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। বিসিবিকে নতুন করে ভাবতে হয় বিকল্প নেতৃত্ব নিয়ে। সে বছর ভারত সফরে টেস্টে মুমিনুল হক আর টি২০-তে মাহমুদউল্লাহকে অধিনায়ক করা হয় একপ্রকার বাধ্য হয়েই। তিন সংস্করণে তিন অধিনায়ক কার্যকর হয় সেই থেকে। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সাকিব দলে ফেরার পরও নিয়মটা বহাল থাকে। তিন সংস্করণে তিন অধিনায়ক নেতৃত্ব দেন প্রায় তিন বছর। যে কারণে সাকিবের হাত ধরে তিন অধিনায়ক প্রক্রিয়ায় যাওয়া এবং বেরিয়ে আসা দুটোতেই জড়িয়ে আছেন সাকিব। নিষেধাজ্ঞার আগে সাকিব ছিলেন দুই সংস্করণের (টেস্ট ও টি২০) অধিনায়ক। তাঁর প্রত্যাবর্তনও হলো পুরোনো চিত্রনাট্য অনুসারে। এর কারণও আছে, বিসিবি চায় সাকিবকে সামনে রেখে ভবিষ্যৎ জাতীয় দল গুছিয়ে নিতে।
নিষেধাজ্ঞা-পূর্ব সাকিবকে নিয়ে বিসিবির পরিকল্পনা ছিল বড় কোনো টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। তিন সংস্করণেই দলের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দেখতে পাওয়া। মুমিনুল বা মাহমুদউল্লাহকে দিয়ে যেটা পূরণ হয়নি। এ কারণেই বিতর্ক একপাশে রেখে সাকিবে সওয়ার হওয়া বিসিবির। বিসিবি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর জালাল ইউনুস সমকালকে বলেছিলেন, 'সাকিবকে নিয়ে দুই বছরের একটি পরিকল্পনা আছে। বোর্ড চায় সামনের দুই বছর দেশের ক্রিকেটের জন্য নিজেকে সব দিক থেকে উজাড় করে দেবে সে। তিন সংস্করণেই শক্তিশালী একটি দল হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।' ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সাকিবকে টেস্ট দলের অধিনায়ক করার মধ্য দিয়ে সে প্রক্রিয়া শুরু হয়। এশিয়া কাপ দিয়ে টি২০ দলের নেতৃত্ব ফিরে পেলেন তিনি। বিসিবির চাওয়া পূরণ করতে সাকিবও কাজে নেমে পড়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে বাজেভাবে টেস্ট সিরিজ হেরে গেলেও ক্রিকেটারদের কিছু বার্তা দিয়েছেন তাৎক্ষণিকভাবে। 'টেস্ট দলে থাকতে হলে পারফরম্যান্স করেই থাকতে হবে।' টি২০ মিশনেও সাকিবের একটি পরিকল্পনা থাকা স্বাভাবিক।
চার সিনিয়র ক্রিকেটার সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে বড়জোড় দুই থেকে তিন বছরের পরিকল্পনায় যেতে পারবে বিসিবি। তাঁরা বিদায় নেওয়ার আগে বিকল্প খেলোয়াড় দিয়ে শক্তিশালী একটি দল হয়ে উঠতে হবে বাংলাদেশকে। সে প্রক্রিয়াই শুরু হয়েছে। বিসিবির এই পরিকল্পনা সম্পর্কে একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'সাকিব সময়ের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় কোনো সন্দেহ নেই। দেশ তাঁকে তৈরি করেছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, সে দেশকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমরা মনে করি, সব দিক থেকে দেশের ক্রিকেটকে এখন সে আরও বেশি কিছু দিতে পারবে। ছেলেদের গাইড করে ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে। এ কারণেই সাকিবের ভুলত্রুটিগুলো একপাশে রেখে অধিনায়ক করা।' বিষয়টি সাকিবেরও অজানা নয়। তিনিও চান, বিদায় বলার আগে জাতীয় দলের ব্যাটন যোগ্য উত্তরসূরিদের হাতে তুলে দিতে।