বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠায় আমরা এখনও সফল নই
মানবাধিকারকর্মী ও বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সমকালকে দিয়েছেন ভার্চুয়ালি সাক্ষাৎকার।
সুলতানা কামাল : এটা সর্বজনস্বীকৃত, বঙ্গবন্ধু ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। আমরা তাঁর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। স্লোগান দিয়েছি 'আমার নেতা, তোমার নেতা- শেখ মুজিব, শেখ মুজিব'। অতএব, স্বাধীন বাংলাদেশের কোটি মানুষের হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু জাগরূক থাকবেন- সেটাই স্বাভাবিক। এটাও সত্য যে, পঁচাত্তরের ঘাতকরা এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার সুবিধাভোগীরা বঙ্গবন্ধুর নাম বাংলাদেশ থেকে মুছে দিতে চেয়েছিল। তারা তা করার সর্বাত্মক চেষ্টাও করেছে। তবে সাধারণ মুক্তিকামী মানুষের মনে বঙ্গবন্ধু সদা জাগরূক থেকেছেন, এখনও আছেন।
বঙ্গবন্ধুর নাম বলতে অনেক ঘটনার কথাই মানসপটে ভেসে ওঠে। তাঁর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে যে গণআন্দোলন। 'জেলের তালা ভাঙব, শেখ মুজিবকে আনব' স্লোগানে বিদীর্ণ রাজপথ। শেখ মুজিবের জেল থেকে মুক্ত হওয়া। ৭ মার্চের ভাষণ, ৩২ নম্বরে নদীর স্রোতের মতো মানুষের ঢল শুধু বঙ্গবন্ধুকে একনজর দেখবে বলে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর শারীরিক অনুপস্থিতি সত্ত্বেও তাঁর দীর্ঘ ছায়া যে আমাদের ঘিরে রেখেছিল- সে কথা সকৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করি।
মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ একে অপরের পরিপূরক। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশ যেভাবে পরিচালিত হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের মৌলিক চরিত্রের কিছুই বজায় রাখা হয়নি। তখন বঙ্গবন্ধুকে শুধু মানুষের মন থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে তা নয়, সবকিছু তাঁর আদর্শের বিপরীতে চালানো হয়েছে। ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুর দল ক্ষমতায় আসার পরে মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশ পরিচালনার প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে বারবার। আমরা কিছুটা পথ অগ্রসরও হয়েছি। দুঃখজনকভাবে এখনও সেই আদর্শ প্রতিষ্ঠায় আমরা সন্তোষজনকভাবে সফল হতে পারিনি। আরও অনেক বেশি দৃঢ়তা ও সাহসিকতার সঙ্গে স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে চলতে হবে সবাইকে। মানবাধিকারের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় যত্নবান হতে হবে। একটি সমতাভিত্তিক, সামাজিক ন্যায়বিচারসম্পন্ন এবং মানবসত্তার মর্যাদা রক্ষায় নিবেদিত জাতি গঠনে রাজনৈতিক ও সাধারণ জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সুযোগের ওপর জোর দিতে হবে। আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে আমরা সেই অঙ্গীকারই করেছি।