ভারতের ‘অগ্নিপথ’ নিয়ে নেপালে দুশ্চিন্তা
বিতর্কিত তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারে ভারত সরকারকে যাঁরা বাধ্য করেছিলেন, সেই কৃষকসমাজ এবার অবসরপ্রাপ্ত সেনানীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে। ৭ আগস্ট থেকে এক সপ্তাহের এই আন্দোলন কর্মসূচি যৌথভাবে ঘোষণা করে ‘সংযুক্ত কিষান মোর্চা’ ও ‘ইউনাইটেড ফ্রন্ট অব এক্স সার্ভিসমেন’ বলেছে, কৃষক পরিবাররাই ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সমৃদ্ধ করেছে। ‘অগ্নিপথ’ হবে তাদের দুর্দশার কারণ।
কিন্তু এই আন্দোলন নয়, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিন্তিত নেপালের সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গতি–প্রকৃতি নিয়ে। ৭৫ বছর ধরে ভারতীয় বাহিনীতে নেপালি গোর্খারা স্থায়ী চাকরি করছেন। এবার থেকে সেই নিযুক্তি হবে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প অনুযায়ী। তাতে নেপালের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। নেপাল তো বটেই, ভারতেও বিভিন্ন মহলে বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। আশঙ্কা, অগ্নিপথ দুই দেশের সম্পর্ক নষ্ট তো করবেই, প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকেও নেপালে প্রভাব বিস্তারে নতুনভাবে উৎসাহিত করবে।
‘অগ্নিপথ’ ও নেপাল
ভারতীয় বাহিনীর ‘সংস্কারের স্বার্থে’ গত জুন মাসে অগ্নিপথ প্রকল্পের ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রকল্প অনুযায়ী সাড়ে ১৭ থেকে ২১ বছর বয়সীদের স্বল্প মেয়াদের প্রশিক্ষণ শেষে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীতে চার বছরের জন্য জওয়ান হিসেবে নিয়োগ করা হবে। তাঁদের ডাকা হবে ‘অগ্নিবীর’ নামে। চার বছরের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে ২৫ শতাংশ উপযুক্ত ‘অগ্নিবীর’ পাকাপাকিভাবে বাহিনীতে নিযুক্ত হবেন। বাকি ৭৫ শতাংশকে বিদায় জানানোর সময় দেওয়া হবে প্রায় ১২ লাখ রুপি, ভবিষ্যৎ পাথেয় হিসেবে। অগ্নিবীরদের মাসিক বেতন থেকে একটি পরিমাণ টাকা কাটা হবে, সমপরিমাণ টাকা দেবে সরকার। চার বছরে সেই টাকা সুদ–আসলে হবে প্রায় ১২ লাখ। ওই টাকা করযোগ্য নয়।
প্রথাগত স্থায়ী নিযুক্তির বদলে চুক্তিভিত্তিক ‘অগ্নিপথ’ চালুর কারণ হিসেবে ঘোষিত সরকারি যুক্তি, জওয়ানদের গড় বয়স কমিয়ে সক্ষমতা বাড়ানো। এই মুহূর্তে বাহিনীর গড় বয়স ৩২। অগ্নিপথ কমিয়ে করবে ২৬। অঘোষিত কারণ, পেনশন ও অবসরকালীন বিভিন্ন সুযোগ–সুবিধার দরুণ সরকারের বিপুল আর্থিক বোঝা হালকা করা। প্রথম বছরে ৪৬ হাজার অগ্নিবীর নেওয়া হবে। সে জন্য ভারতে তিন বাহিনীর নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চলতি মাসের ২৫ তারিখ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর নেপালে দুই পর্যায়ে ভর্তি শিবির খোলার কথা।