শেখ মুজিবের বিচার প্রহসন শুরু
সন্দেহ দানা বেঁধে উঠেছিল শেখ মুজিব বেঁচে আছেন তো? এডওয়ার্ড কেনেডি ঠিক এ প্রশ্নটিই করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টকে। এ প্রশ্নে স্টেট ডিপার্টমেন্ট বিচলিত হয়ে পড়ে। কূটনৈতিক ও গোয়েন্দা সূত্রে আশ্বস্ত হন এমন কিছু ঘটেনি। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সূত্র ধরে ভারতের দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার ১১ আগস্ট ১৯৭১-এর অন্যতম শিরোনাম : ‘মুজিবুর’স ট্রায়াল বিগিন্স : ইন্ডিয়া অ্যাপিলস টু নেশনস’। ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে সংবাদের পুরোটাই ভাষান্তর করা হচ্ছে।
রাওয়ালপিন্ডি, আগস্ট ১১ : অবহিত সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অভিযোগে জীবন-মরণের প্রশ্নে আজ আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার শুরু হয়েছে। বিচার সংগোপনে প্রক্রিয়াধীন। বিচার যে শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করতে পাকিস্তান সরকার অস্বীকার করেছে। সরকার সামরিক ট্রাইব্যুনালের অবস্থান, বিচারকদের নাম ও বিবাদীর আইনজীবীর নাম জানাতেও সম্মত হয়নি। তিনটি বিদেশি বেতার রেডিও আক্রা, রেডিও কোলোন এবং রেডিও অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, আজ শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার শুরু হয়েছে, তবে কোনো রেডিও-ই খবরের উৎস কী তা উল্লেখ করেনি।
নয়া দিল্লি থেকে দ্য স্টেটসম্যানের বিশেষ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, মি. রহমানের জীবন রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী ২৪টি দেশের কাছে আবেদন পেশ করেছেন। সোভিয়েত ইউনিয়নও একই ব্যাপারে আবেদন জানাবে বলে মনে করা হচ্ছে। একই বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে টেলিগ্রাম বার্তা পাঠিয়েছেন। ওয়াশিংটন থেকে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান সরকারের কাছে দ্বিতীয়বারের মতো উদ্বেগ ব্যক্ত করেছে যে শেখ মুজিবুর রহমানের গোপন বিচারে কোনো ‘সামরিক অ্যাকশন’ পূর্ব বাংলা সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের সব সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দেবে। সেক্রেটারি অব স্টেট রোজার্স যুক্তরাষ্ট্রের ১১ জন সিনেটরের একটি টেলিগ্রাম এবং ৫৮ জন কংগ্রেসম্যান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আগা হিলালির কাছে হস্তান্তর করেছেন, তাতে শেখ মুজিবের প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে ডেমোক্র্যাট-দলীয় সিনেটর কেনেডির পাকিস্তান ও ঢাকা সফরের আবেদন প্রত্যাখ্যান করায় স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ইউনাইটেড নিউজ অব ইন্ডিয়া মুজিবনগর থেকে প্রাপ্ত একটি নির্ভরযোগ্য খবর থেকে উদ্ধৃত করেছে ঢাকায় গৃহবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রীকে বিমানযোগে করাচি নেওয়া হয়েছে। ধানমন্ডি থেকে সেনা প্রহরায় এয়ারপোর্টে এনে তাকে করাচিগামী বিমানে ওঠানো হয়েছে। তাকে করাচি না অন্য কোথাও আটক রাখা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। (কিন্তু বাস্তবে তাকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকাতেই গৃহবন্দি করে রাখা হয়)