ছিটমহল : নরকযন্ত্রণা থেকে স্বর্গে ফেরা

কালের কণ্ঠ এসএম আব্রাহাম লিংকন প্রকাশিত: ০১ আগস্ট ২০২২, ০৯:০২

রাজরাজড়ার পাশা খেলায় জন্ম নেওয়া ভূমিগুলো ভারত বিভক্তিতে হয়ে পড়েছিল ছিটমহল নামের কারাগার। জুয়ার দানের প্রতিদান ছিল ভূমি। সেই ভূমির ভূমিপুত্ররাই হয়ে পড়েছিল ছিটমহলের আমৃত্যু বন্দি।


যাঁরা ছিটমহল সম্পর্কে জানেন না তাঁদের পক্ষে ছিটমহলের মানুষের কষ্ট উপলব্ধি করা অসম্ভব। আজকের দিনে যাঁরা মূল ভূখণ্ডের অংশ হওয়া ছিটমহলে বেড়াতে যান, তাঁদের পক্ষে সেই কষ্ট অনুভব করা আরো অসম্ভব।


১৯৪৭ সালে করদ মিত্র রাজ্যগুলো ভারতীয় ইউনিয়ন বা পাকিস্তানে যোগ না দেওয়ায় তাদের মালিকানাধীন ভূখণ্ডগুলো তাদের অধীনেই থেকে যায়। মালিকানা তাদের থাকলেও ভূমির চারদিকে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায় ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের সীমানাগুলো। রাষ্ট্র পৃথক হওয়ায় ছিটমহলের মানুষের চলাচলের স্বাধীনতা রহিত হয়ে যায়। এক রাষ্ট্র আরেক রাষ্ট্রের নাগরিকদের চলাচলে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ডা. বিধান চন্দ্র রায় কোচবিহার মহারাজার বন্ধু হওয়ায় তিনি বন্ধুকে বুঝিয়ে কোচবিহার রাজ্যকে ভারতীয় ইউনিয়নে যুক্ত করতে সফল হন। প্রচার রয়েছে কোচবিহার রাজ্য ‘সি’ ক্যাটাগরির রাজ্যের মর্যাদা পাবে। ইতিহাসে সে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নেই। সে যাই হোক, কোচবিহার ভারতের অংশ হওয়ায় ভারতের অংশে পড়ে যায় পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে থাকা কোচবিহার মহারাজার মালিকানাধীন এলাকাগুলো। আবার রংপুরের মহারাজা পাকিস্তানে থেকে যাওয়ায় তাঁর মালিকানাধীন ভারতীয় সীমানার অভ্যন্তরের ভূমিগুলো পাকিস্তানের ছিটমহলের তকমা পায়। পাকিস্তান ও ভারতের টানাপড়েনের সবচেয়ে বেশি ছাপ পড়ত ছিটমহলগুলোর মানুষের জীবনে। তারা নিজ বাসভূমে পরাধীন হয়ে পড়ে। এ যন্ত্রণা ছিটমহলবাসীকে প্রায় সাত দশক বইতে হয়। নেহরু-নূন থেকে শুরু হয়ে দুই দেশের বেশ কিছু সরকার বিষয়টি আলোচনার টেবিলে নিলেও কার্যত সফলতা পায়নি ছিটমহল বিনিময়।


একাত্তরে বাংলাদেশ জন্মের পেছনে ভারতীয় ছিটমহলের নাগরিকদেরও অনেক অবদান ছিল। পাটগ্রাম ও কুড়িগ্রাম অঞ্চলের অনেক ছিটমহলের নাগরিক শুধু সহযোগিতাই করেননি, কেউ কেউ বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধ করেছেন। একাত্তরে বেশ কিছু ছিটমহল মুক্তিযোদ্ধাদের অভয়ারণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাও রয়েছেন সেখানে।


ছিটমহল মানেই কারাগার ছিল। শুধু তা-ই নয়, সেখানে নাগরিকজীবন বলতে কোনো কিছুই ছিল না। হত্যা করলেও তার বিচার ছিল না। থানা ছিল না। বিচারালয় ছিল না। জমির বৈধ ক্রয়-বিক্রয়ের সুযোগ ছিল না। বৈধ স্থানীয় সরকার ছিল না। দু-একটি কওমি মাদরাসা ছাড়া সেখানে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল ছিল না। অর্থাৎ ছিটমহলে একজন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের যে দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল তা করতে রাষ্ট্র প্রকৃত অর্থেই ব্যর্থ ছিল।


যাঁরা হজে গেছেন বা গয়া-কাশিতে গেছেন তাঁরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নিজেদের রাষ্ট্রীয় পরিচয় লুকিয়ে ভিন্ন রাষ্ট্রের নাগরিকের পরিচয় তৈরি করে পুণ্যস্থানগুলোতে গিয়েছিলেন। হাজারো অসুস্থ ছিটমহলবাসী জাতীয় পরিচয় লুকিয়ে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের চিকিৎসালয়ে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। হাজারো জননী প্রসবযন্ত্রণা নিয়ে ভিন্ন দেশের হাসপাতালে স্বামীর নাম ও ঠিকানা লুকিয়ে ভর্তি হয়েছেন। কেউ কেউ চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশের ভয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও