গত শুক্রবার চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একটি রেলক্রসিংয়ে যে ১১টি প্রাণ ঝরে গেল, তাকে নিছক দুর্ঘটনা বলে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। আরএনজে কোচিং সেন্টারের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা খৈয়াছড়া ঝরনা দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ফেরার পথেই সেই আনন্দ বিষাদে পরিণত হলো। আমরা নিহত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অন্যদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রতি উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। যদিও মানুষের জীবনের যে ক্ষতি, তা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়।
প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, তাঁদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি বড়তাকিয়া স্টেশন এলাকায় রেলক্রসিংয়ের ওপর উঠতেই চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী ট্রেন সেটিকে ধাক্কা দেয় এবং এক কিলোমিটার পর্যন্ত ঠেলে নিয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, রেললাইনের পাশের খুঁটি উপড়ে পড়েছে, বিভিন্ন স্থানে মাইক্রোবাসের যন্ত্রাংশ এবং মাইক্রোবাসের আরোহীদের জামা, জুতা, ব্যাগ ইত্যাদি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। মাইক্রোবাসে থাকা ১৭ আরোহীর মধ্যে ১১ জন ঘটনাস্থলে মারা যান, বাকি ৬ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়।
তাঁদের পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর। রেলক্রসিং পাহারায় নিয়োজিত গেটম্যান সে সময় ছিলেন না। ছিল না প্রতিবন্ধক দণ্ড। সে ক্ষেত্রে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ দুর্ঘটনার দায় এড়াবে কীভাবে? চার বছর আগে এই মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট রেলক্রসিংয়েও দুর্ঘটনা ঘটে, যাতে দুজন মারা যান। ফলে এগুলো রেলক্রসিং না মৃত্যুফাঁদ, সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনেও রেলওয়ে দুর্ঘটনার ভয়াবহ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। দেশের ৮২ শতাংশ রেলক্রসিংই অরক্ষিত, অর্থাৎ ট্রেন চলাচলের সময় যানবাহন আটকানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। বাকি ১৮ শতাংশে পাহারাদার ও প্রতিবন্ধক—দুটিই আছে। আর রেলওয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ৮৫ শতাংশই ঘটে রেলক্রসিংয়ে। অর্থাৎ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যদি রেলক্রসিংগুলো নিরাপদ রাখতে পারত, রেল দুর্ঘটনার লাগাম টেনে ধরা কঠিন হতো না।
পৃথিবীর সব দেশেই রেলওয়েকে নিরাপদ পরিবহন ভাবা হয়। রেলওয়ের উন্নয়নে সেখানে অনেক কাজও হয়। কিন্তু বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে রেলওয়েকে অবহেলা করা হয়েছে সড়ক পরিবহন ব্যবসায়ীদের সুবিধা করে দিতে। রেলওয়ে আলাদা মন্ত্রণালয় হওয়ার পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। রেলওয়ের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ম ও অব্যবস্থা। যাত্রীদের অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হতে হয়। কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করে।