গ্যাসভিত্তিক আরও চার বিদ্যুৎকেন্দ্র
দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সরকারের নেওয়া বিশেষ প্রকল্পের মধ্যে ভাড়াভিত্তিক ‘রেন্টাল’ ও ‘কুইক রেন্টাল’ অন্যতম। বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে নানামুখী আলোচনা সমালোচনার মধ্যে ২০০৯ সালে এসব প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। বিদ্যুৎ খাতে দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্পের পরিবর্তে স্বল্প মেয়াদি প্রকল্পগুলো চাহিদা পূরণ করলেও এর জন্য সরকারকে গুনতে হয়েছে কয়েক গুণ বেশি অর্থ।
সম্প্রতি বিশ্ববাজারে গ্যাস ও এলএনজির মুল্য বৃদ্ধির ফলে অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্রই উৎপাদন করতে পারছে না। ফলে দিতে হচ্ছে শিডিউলভিত্তিক লোডশেডিং। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশে (পিজিসিবি) সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন তরলীকৃত প্রকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) স্বল্পতার জন্য ১৬টি কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। উৎপাদন ব্যহত হলেও প্রতিটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রকেই হাজার কোটি টাকার ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। এই অবস্থায় নতুন করে আরও ২ হাজার ৭৬৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাসভিত্তিক চারটি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
গ্যাস সংকটে থাকা বিদ্যুৎশিল্পে নতুন কেন্দ্র যোগ হওয়ার বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি ও গবেষণা শাখা পাওয়ার সেল এর মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন ঢাকাটাইমসকে বলেন, যে সাতটা নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হচ্ছে সেগুলো আমাদের মাস্টার প্ল্যানের অংশ। এখনকার গ্যাসের শর্টেজের কারণে সংকট চলছে, এর সঙ্গে লং টার্ম মাস্টার প্ল্যানের হিসাব মেলানো যাবে না। এভাবে চললে তো পুরো পৃথিবী টালমাটাল হয়ে যাবে। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনে এখন আর ক্যাপাসিটি চার্জ নেই। মানুষ সেটা জানে না।
নিজেদের দুর্ভাগ্যের কথা জানিয়ে পাওয়ার সেলের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা হয়তো মানুষকে বোঝাতে পারিনি। দেশে এখন আর কুইক রেন্টাল খুব একটা নেই। যেগুেেলা কুইক রেন্টাল ছিল এমন ১০ থেকে ১২টা ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পে’ নিয়মে চলছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ করলেই টাকা পাবে, তা নাহলে পাবে না। আর যেসব কোম্পানির উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে পাঁচ বা দশ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, সেগুলো ডিজেলচালিত। যখন অন্য কোনো উপায় থাকে না। তখনই সেগুলো ব্যবহার করা হয়।
চলমান সংকটের বিষয়ে পাওয়ার সেলের এই মহাপরিচালক বলেন, আমাদের এই সংকট সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোকাবিলা করতে হবে। এরপর সব ঠিক হয়ে যাবে। সরকার সেভাবেই কাজ করছে। অক্টোবর থেকে বিদ্যুতের ভোগান্তি থাকবে না।
নতুন করে গ্যাস ও এলএনজিনির্ভর নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পগুলো হচ্ছে, ৮৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন্ রুপসা ৮০০ (২*৪০০) মেগাওয়াট সিসিপিপি, ৫৮৩ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন্ মেঘনাঘাট ৫৮৩ মেগাওয়াট সিসিপিপি, ৫৮৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন্ মেঘনাঘাট-নারায়ণগঞ্জ ৫৮৪ মেগাওয়াট সিসিপিপি ও ৭১৮ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন মেঘনাঘাট ৭১৮ মেগাওয়াট সিসিপিপি। মোট ২৭৬৫ মেগাওয়াটের এ প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি প্রায় ৩০ শতাংশ।
ডিজেলভিত্তিক মোট ৪০৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ছয়টি, ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ১৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি এবং গ্যাসভিত্তিক মোট ৪৫৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি মিলে মোট ১ হাজার ১৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৩টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়ে গেছে। এছাড়া কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ইতোমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে।
দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ২২ হাজার ৩৪৮ মেগাওয়াট। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ উৎপাদন ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। বাড়তি সক্ষমতা সাড়ে ৭ হাজার মেগাওয়াট। অর্থাৎ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ সক্ষমতা অব্যবহৃত থাকছে।