সাম্প্রদায়িকতা ও বাংলাদেশ : বর্তমান প্রেক্ষিত
রামু, গোবিন্দগঞ্জ ও নাসিরনগরে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা আমরা ভুলে যাইনি। কারণ সেগুলো তো ইতিহাস-লাঞ্ছিত মানবতা এবং কদর্য অমানুষিকতার ইতিহাস- যেখানে দেশের প্রশাসন প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকায় চিহ্নিত। প্রশ্নবিদ্ধ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল। সর্বসাম্প্রতিক কিছু সাম্প্রদায়িক ঘটনাও আমাদের বিবেকের কাছে যেন উদ্যত-শানিত প্রশ্ন। সব ঘটনার শিকার হিন্দু- তথাকথিত ধর্মীয় সংখ্যালঘু। তবে গণতন্ত্রে ধর্মের ভিত্তিতে সংখ্যার গরিষ্ঠতা বা লঘিষ্ঠতা অপ্রাসঙ্গিক। গণতন্ত্রে সবাই মানুষ, নাগরিক এবং তারা সবাই সমমর্যাদা ও অধিকারসম্পন্ন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল এভাবে। তার পর তো তার আর পর নেই- যে নদী যেন মরুপথে হারালো ধারা। অর্থাৎ জন্মলগ্নের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক। এমন ফারাক কেমন করে হলো, এই কথায় পরে আসছি। আভাসে বলে রাখি, এ যেন পেয়ে হারানোর মতো বেদনাদায়ক। আজকের বাংলাদেশের চালচিত্র প্রত্যক্ষ করে বিবেকী মানুষ বেদনায় বিদীর্ণ হতে বাধ্য।
বেদনার কারণ ঘটনাগুলো নিয়ে এখন কিছু বলি। ২০০৬ সালের ১৩ মে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কান ধরে উঠবোস করানো হয়েছিল। তথ্য ছিল, স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে ঘটনাটি ঘটেছিল। ঘটনার পর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি শ্যামল কান্তিকে চাকরিচ্যুত করেছিল সাময়িক। সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। কিন্তু আদালত তাকে অব্যাহতি দেন। পত্রিকা থেকে জানা যায়, সংসদে কোনো কোনো মন্ত্রী ঘটনাটির নিন্দা জানিয়েছিলেন। ঘটনাটি এভাবেই ধামাচাপা দেওয়া হয়। প্রশ্ন দুটি- এক. ধর্ম অবমাননার অভিযোগ কতটুকু তথ্যভিত্তিক? দুই. শ্যামল কান্তির যে শাস্তি সেলিম ওসমান ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি নির্ধারণ করেছিলেন, তা তো আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো অপরাধ। উপরন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।