অপচয় করার অধিকার কারও নেই
আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। স্কুলশিক্ষক বাবার নির্ধারিত বেতনের টাকায় ছয় ভাইবোনের পরিবার চলতে টানাটানি লেগেই থাকতো। ঠিক দারিদ্র্য কী, সেটা না দেখলেও; সচ্ছলতাও দেখিনি। টাকা-পয়সার টানাটানি থাকলেও সুখের কমতি ছিল না। অল্পতেই আমরা খুশি হতাম। কোনো একটা কিছু নিয়ে ভাইবোনদের মধ্য খুনসুটি, মারামারি, চুলাচুলি; চিৎকার শুনে আম্মা চলে এলে ঢালাও সবার মার খাওয়া- আহা আনন্দ ছিল উপচেপড়া।
মফস্বল ছেড়ে তিন দশক ঢাকায় সাংবাদিকতা করেও নিজের শ্রেণি বদলাতে পারিনি। হয়তো মধ্যবিত্তের ওপরের দিকে উঠেছি। পুরোপুরি সচ্ছলতা না পারলেও চেষ্টা করি একমাত্র সন্তানের যৌক্তিক চাওয়া যেন পূরণ করতে পারি। আমি কখনো অপচয় করি না, অপব্যয় করি না। তবে পছন্দের ব্যাপারে আমার একটু গোয়ার্তুমি আছে। রাত ৮টার মধ্যে শপিংমল, দোকানপাট বন্ধ হলে শুধু বিদ্যুৎই সাশ্রয় হবে না, কেনাকাটায়ও খরচ কম হবে। যানজট কম হবে। তাতে জ্বালানি তেলের সাশ্রয় হবে, পরিবেশও ভালো থাকবে।
আমাদের ২৭ বছরের সংসারে ১৩ বছর কোনো সোফা ছিল না। যাই কিনেছি, প্রয়োজনে অপেক্ষা করেছি, কিন্তু পছন্দসই জিনিসই কিনেছি। মুক্তি ও প্রসূনকে সবসময় বলি কিছু কিনতে গেলে জিনিস দেখবে, কোয়ালিটি দেখবে, প্রাইস ট্যাগ নয়। জিনিস পছন্দ হলে দাম দেখবে, সামর্থ্য থাকলে এখন কিনবো, নইলে পরে কিনবো। আমার স্ত্রী মুক্তি হাসে আর বলে, ভাবচক্কর জমিদারের, মানিব্যাগ কেরানির।
মুক্তির নজর অবশ্য উঁচুতে। সে প্রাইস ট্যাগ না দেখে এমন জিনিস পছন্দ করে, যেটা কেনার সাধ্য আমাদের থাকে না, কখনো হবেও না। তাতে আমাদের মন খারাপ হয় না। আমরা ভালো ভালো জিনিস পছন্দ করি আর অপেক্ষা করি। আগে বাসায়, রেস্টুরেন্টে বা কোনো আমন্ত্রণে খেতে বসলে প্রসূনকে বলতাম, যতটুকু ভালো লাগে, ততটুকুই খা। জোর করে বা অরুচি করে খেতে হবে না। তবে করোনা এসে জীবন সম্পর্কে আমার ভাবনা বদলে দিয়েছে একেবারে। পছন্দ হোক আর নাই হোক, দাম যাই হোক; জিনিসটা আমাদের লাগবে কি না; সেটাই প্রথম বিবেচ্য।