আগামীর মুদ্রানীতি: জিডিপি নয়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হোক প্রধান লক্ষ্য
তখন লকডাউনের সময়। ২০২০-এর এপ্রিল। ভয়ঙ্কর এক ভয়ের মধ্য দিয়ে জীবন চলছিল। পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা সবাই অন্ধকারে। ওই সময় অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে ডেইলি স্টারের বাংলা বিভাগের জন্য একটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম। 'করোনাভাইরাস ও যুদ্ধকালীন অর্থনীতি'। লেখাটি ওই বছর ১৫ এপ্রিল প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়েছিল, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে পণ্যের উপর মানুষের চাহিদা কমবে। এতে তৈরি হবে ডিফ্লেশন বা মূল্য সংকোচনের পরিস্থিতি। কিন্তু, মহামারির পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তৈরি হবে তীব্র মূল্যস্ফীতি। এভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য গণক হওয়ার প্রয়োজন নেই। গত ১০০ বছরে সংঘটিত বৈশ্বিক মন্দাগুলো বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি সংকটে এই ধরনের পরিস্থিতি দেখা যায়।
ওই লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার মাসখানেক পরেই অলিভিয়ার ব্লনচার্ড নামের একজন অর্থনীতিবিদ ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে একই বিষয়ের ওপর একটি প্রবন্ধ লিখেন। খুব সম্ভবত করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর দুনিয়াতে প্রথমবারের মতো পেন্ট-আপ ডিমান্ডের বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেন। অনেকদিন ধরে মানুষ বঞ্চিত থাকার পর হঠাৎ সুযোগ পেলে ভোগের প্রতি আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যাওয়াকে পেন্ট-আপ ডিমান্ড বলা হয়। মন্দাকে মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন দেশে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য প্রচুর ছাপানো টাকা বাজারে সরবরাহ করতে হচ্ছিল। এর সঙ্গে যদি পেন্ট-ডিমান্ডের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেটি নিঃসন্দেহে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি তৈরি করবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রাক্তন অর্থনীতিবিদ ছিলেন ব্লনচার্ড। তার ওই ভবিষ্যদ্বাণীর স্বরূপ আমরা গতবছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে দেখতে শুরু করেছি।