লক্ষ্য থেকে বহুদূরে
চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে ঘোষিত মুদ্রানীতির কোনো সূচকের লক্ষ্যমাত্রাই অর্জিত হয়নি। তিন দফায় নীতিসুদ হার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। বাজারে টাকার জোগান, অভ্যন্তরীণ ঋণ, সরকারি ঋণ, বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন থেকে বহুদূরে রয়েছে। নিট বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বা সম্পদ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রার যেমন ধারেকাছেও যাওয়া সম্ভব হয়নি, বরং কমেছে। নিট অভ্যন্তরীণ সম্পদের হার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম বেড়েছে। খেলাপি ঋণও কমানো সম্ভব হয়নি। উলটো আরও বেড়েছে। অন্যান্য সূচকেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, দেশে ও বৈশ্বিকভাবে বিদ্যমান পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আর্থিক খাতের নানা সূচকের প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসায় ও তা প্রকাশ করার কারণেই মূলত এমন চিত্র বেরিয়ে এসেছে। গত সরকারের আমলে মূল্যস্ফীতি, খেলাপি ঋণসহ প্রায় সব খাতের প্রকৃত চিত্র গোপন করা হয়েছিল। ফলে মূল্যস্ফীতির হার যেমন কমিয়ে দেখানো হয়েছিল, তেমনি জিডিপির প্রবৃদ্ধি ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়। খেলাপি ঋণ কম দেখানোর পাশাপাশি ব্যাংক খাতের লুটপাটের চিত্র আড়াল করা হয়। যে কারণে মুদ্রানীতির প্রকৃত চিত্র মানুষের সামনে আসেনি। গত ৫ আগস্ট আওয়ায়ী লীগ সরকারের পতন হলে আর্থিক খাতের প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসতে শুরু করে। ফলে এখন মুদ্রানীতির প্রকৃত চেহারাও বেরিয়ে এসেছে। এছাড়া সরকার পরিবর্তনের পর সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতা, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের পালিয়ে যাওয়া, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিকবার বন্যার কারণেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেশি মাত্রায় সংকুচিত হয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করেছে।
গত ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে বৈশ্বিক মন্দা দেখা দেয়। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও। ফলে বেড়ে যায় পণ্যের দাম, ডলারের দাম, সংকট দেখা দেয় বৈদেশিক মুদ্রার। যার প্রভাবে বেড়ে যায় মূল্যস্ফীতি। যে ধারা এখনো চলমান রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে ২০২২ সালের জুলাই থেকেই সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করা শুরু হয়। যে ধারা এখনো অর্থাৎ আড়াই বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের আগামী ছয় মাসের জন্যও সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হবে।