অর্থনৈতিক সক্ষমতা নয়, আবেগের প্রতীক
বহুল কাক্সিক্ষত সোনালি স্বপ্নের দ্বার পদ্মা সেতু উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে আগামী ২৫ জুন। প্রায় ১৭ কোটি মানুষের আবেগ বিজড়িত পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রতীক হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর পাশাপাশি দক্ষিণের ২১ জেলাকে রাজধানীর সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন বন্ধনে আবদ্ধ করে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বয়ে আনবে এক নতুন বিপ্লব। নির্মিত সেতুটি নানান চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ৬.১৫ কিলোমিটারের এ সেতুকে ঘিরে যত গল্পকথা, আলোচনা ও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা যেন স্থাপত্য ইতিহাসে এক বিরল মহাকাব্য। সেতুর একপ্রান্ত মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও অন্যপ্রান্ত শরীয়তপুরের জাজিরায় মিলিত হয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৪ কোটি মানুষের সেতুবন্ধন তৈরি করবে সমগ্র দেশবাসীর সঙ্গে। মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৪ শতাংশ জনগোষ্ঠী যার স্বপ্নে বিভোর ছিল গত অর্ধশত বছরেরও বেশি সময় ধরে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে মূল নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর ১০ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে সর্বশেষ স্প্যান বসানোর মাধ্যমে যুগলবদ্ধ হয় স্রোতস্বিনী পদ্মার দু’কূল। সমৃদ্ধ দেশ গড়তে ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার চালিকাশক্তি হিসেবে পদ্মা সেতু অসামান্য অবদান রাখবে বলে মনে অনুরণিত হয় বারংবার।
বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবেই ঘনবসতিপূর্ণ। যে কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা শুধু চ্যালেঞ্জিংই নয় বরং দুরূহও বটে। বাংলাদেশের বুক চিড়ে প্রায় সাতশ নদ-নদীর গড়ে ওঠা নেটওয়ার্কের মধ্যে হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন পদ্মাই অন্যতম যা দিয়ে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলধারা বঙ্গোপসাগরে মেশে। বিশে^র সবচেয়ে খরস্রোতা নদী আমাজনের পরেই পদ্মার অবস্থান যার খরস্রোতা প্রকৃতির কারণে দু’কূলের মানুষ দিশেহারা হয়ে এর নাম দিয়েছে কীর্তিনাশা। জলপ্রবাহের এমন বিধ্বংসী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা ছিল যত না চ্যালেঞ্জের, তার চেয়ে ঢের সাহসিকতার। অবশেষে সব বাধা অতিক্রম করে চ্যালেঞ্জ জয়ে প্রস্তুত আজ বাংলাদেশ। সোনালি স্বপ্নের উন্মোচন অতি সন্নিকটে।