সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: এখনো যার উপর ভরসা রাখি
সমাজতন্ত্রের প্রতি তার দুর্বলতা অপার, পক্ষপাত প্রশ্নহীন। পছন্দ করেন সমাজতন্ত্রী পরিচয়। স্বচ্ছন্দবোধ করেন কার্ল মার্ক্স, শ্রেণি সংগ্রাম, মানুষের মুক্তি, সামাজিক সাম্য ও মানবের কল্যাণে লিখতে-পড়তে ও পড়াতে। তিনি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আজ তার ৮৭তম জন্মদিন। বয়সে বার্ধক্যের উপস্থিতি অনেক আগে ঘটলেও চেতনায়-বুদ্ধিজীবীতার প্রশ্নে এখনও তিনি টগবগে এক যুবক। সোজা শিরদাঁড়ায়, ন্যায্যতার প্রসঙ্গে পঞ্চাশোর্ধ্ব বাংলাদেশে তুলনারহিত এক নাম।
দেশের কোটি মানুষের মাঝে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী যেন খ্রিস্টপূর্ব কালের নগর রাষ্ট্র গ্রিসের দার্শনিক সক্রেটিস। জ্ঞান চর্চায় যার ব্যাপ্ত জীবনের লক্ষ্য-মহত্তম এক উদ্দেশ্য। লেখালেখির ভরকেন্দ্রে সমাজতন্ত্র ও তার অনুষঙ্গসমূহের উপস্থিতি প্রবল রেখেই তিনি দায়িত্ব ও কর্তব্য শেষ করেননি, যাপন করেছেন সমাজতন্ত্রের প্রতি উৎসর্গীকৃত এক জীবন। লেখালেখির বিষয়-বৈচিত্র্যও লক্ষণীয়-যদিও সেসবের বেশিরভাগেরই অভিমুখ তার পছন্দের জায়গাকে ঘিরেই। বাঙালি জাতীয়তাবাদের সুলুকসন্ধান ও গতিপ্রকৃতি নিয়ে তার আগ্রহ ঈর্ষণীয়।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের পটভূমি-প্রেক্ষিত ও ইতিহাসের চাপানউতোর নিয়ে যে অবলোকন হাজির করেছেন এ সংক্রান্ত বই 'বাঙালি জাতীয়তাবাদ', এবং 'জাতীয়তাবাদ সাম্প্রদায়িকতা ও মানুষের মুক্তি'তে- তা শুধু তাৎপর্যবাহী নয়, কৌতূহলোদ্দীপকও। জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র—রাজনীতির প্রধান দুই প্রপঞ্চ। আধুনিক রাষ্ট্রের স্তম্ভসমূহের অন্যতম, যা কোথাও সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত, কোথাও নয়। তবে রাজনীতিতে উপেক্ষিত নয় কোনোভাবেই-রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রয়েছে দোর্দণ্ডপ্রতাপ, পক্ষে-বিপক্ষে জারি আছে ক্লান্তিহীন এক তর্কযুদ্ধ।
স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রকে মান্যতা দিয়েছে সর্বাধিক গুরুত্বে-যথাযোগ্য মর্যাদায়। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর লেখালেখি ও পড়াশোনার প্রার্থনালয়ে জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রের যুগল উপস্থিতি কৌতূহলোদ্দীপক ও সবিশেষ বার্তাবাহী। রাজনীতি ও রাষ্ট্রের এই দুই প্রধান প্রপঞ্চের অবলোকন ও তাৎপর্য বিশ্লেষণে তার দৃষ্টিভঙ্গি-স্বাচ্ছন্দ্যবোধ, দুর্বলতা ও পক্ষপাত কেমন ও কতোটা যৌক্তিক—সেই অনুসন্ধানের নিমিত্তে এই লেখা।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সাংবাদিকতা
- সততা
- সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী