অগ্নিযোদ্ধা ও করোনাযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা
সর্বগ্রাসী আগুনের লেলিহান শিখার সঙ্গে অসমযুদ্ধে তিন-চার দিন বিরামহীন, বিশ্রামহীন লড়াই করার পর অবশেষে তাঁরা জয়যুক্ত হয়েছেন—আগুন নিভেছে। তবে সচরাচর যা হয় না, সীতাকুণ্ড রণক্ষেত্রে তাই হয়েছে—অগ্নিনির্বাপক দলের ১০ জন বীর সেনানী ‘শহীদ’ হয়েছেন। এর প্রধান কারণ ওই অসমযুদ্ধ। দমকল বাহিনীর অকুতোভয় বীর সেনানীদের এসওএস (‘সেভ আওয়ার সোল’) পাঠানো হয়েছিল আগুন নেভানোর জন্য।
তাঁরা যথারীতি সেই ডাকে তৎক্ষণাৎ সাড়া দিয়ে ‘ব্যাটল ফিল্ড’-এ গিয়ে যখন লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তখনো কোনো ছোট সাহেব-বড় সাহেব-কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউ তাঁদের বলেননি : সাবধান! শত্রুরা ওখানে অসংখ্য ‘বুবি ট্র্যাপ’ (সমর কৌশলবিশেষ, লুকিয়ে রাখা বোমার ফাঁদ) পেতে রেখেছেন ওই আপাতদৃষ্টিতে নির্দোষ কনটেইনারগুলোর আনাচে-কানাচে। ফায়ার ফাইটাররা জান কবুল করে যখন আগুন নেভাতে ব্যস্ত তখন আচমকা প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে রাসায়নিক পদার্থভর্তি পাত্রগুলো। আর এতেই হতাহত হন ফায়ার ব্রিগেডের সদস্যসহ অনেকেই। অথচ এই ‘মারণাস্ত্রগুলো’র কথা যদি ডিপোর হুজুররা একবারও জানাতেন দমকল বাহিনীকে, তাহলে হয়তো এত মানুষকে এভাবে সুইসাইড করার মতো মরতে হতো না। এক সীতাকুণ্ড অপারেশনে এখন পর্যন্ত ১০ জন ফায়ার ফাইটার শাহাদাতবরণ করেছেন। এর আগে ক্বচিৎ দুই-একজনের প্রাণহানি ঘটলেও এক অপারেশনে ১০ জন ফায়ার ফাইটার কখনো মৃত্যুবরণ করেননি। আর সীতাকুণ্ডের দুর্ঘটনায় অদ্যাবধি মোট প্রাণহানি হয়েছে প্রায় ৫০ জনের। তাঁরা জান্নাতবাসী হোন এই দু’আ করি। শ্রদ্ধাভাজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক সামন্তলালের ভাষ্যমত যাঁরা গুরুতরভাবে দগ্ধ অবস্থায় ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে আছেন তাঁদের মধ্যে অনেকের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। আমরা দু’আ করি, চিকিৎসাধীন সবাই যেন দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন।