মূল্যস্ফীতি হতে হবে কেন্দ্রীয় সূচক
প্রতিটি বাজেটেরই বিশেষ পরিপ্রেক্ষিত থাকে। এ বছরেও তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, দেশে ২০১৯-২০ অর্থবছরে অতিমারি দেখা দেওয়ার পর আমরা এখনও স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে পারিনি। কিছু ক্ষেত্রে পুনরুজ্জীবন ঘটলেও, সম্পূর্ণরূপে উত্তরণ ঘটেনি। দ্বিতীয়ত, ইউক্রেনে যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত এবং পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এক ধরনের সংকট সৃষ্টি করেছে। তৃতীয়ত, প্রায় দেড় দশক পর এবারই সামষ্টিক অর্থনীতি সবচেয়ে কঠিন চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরটি আমাদের এসব অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে কাটাতে হবে।
দুর্বল কাঠামো
বাংলাদেশের সরকারি আয়-ব্যয়ের কাঠামো সর্বদাই দুর্বল ছিল। এ পরিস্থিতি এখনও অব্যাহত। এ দুর্বলতার প্রধান লক্ষণ হলো কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের ওপরে না ওঠা। একই সঙ্গে উন্নয়ন ব্যয়ের তুলনায় রাজস্ব ব্যয় বৃদ্ধির হার বেশি। বাংলাদেশে বাজেট ঘাটতি বাড়ছে না। এর কারণ, আমাদের সীমিত সম্পদও আমরা যথোপযুক্তভাবে খরচ করতে পারি না। তাই আমরা সম্প্রসারণমূলক আর্থিক নীতির কথা বলেও আসলে কম কর, কম ব্যয় ও নিয়ন্ত্রিত বাজেট ঘাটতি- এ রকম একটা পরিস্থিতি নিয়ে আগামী অর্থবছরেও চলতে হবে।
সাম্প্রতিককালে আমাদের শক্তির জায়গা ছিল বৈদেশিক খাত। রপ্তানি, প্রবাসী আয়, বৈদেশিক সাহায্য এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈদেশিক বিনিয়োগ জোরদার থাকায় বৈদেশিক আয়-ব্যয়ের সার্বিক ভারসাম্য বাংলাদেশের পক্ষে ছিল। বৈদেশিক খাতের চলতি হিসাবের মোট ঘাটতি গত বছরের ৫৫৫ মিলিয়ন ডলার থেকে প্রায় তিন গুণ হয়ে এখন দাঁড়িয়েছে ১৪৭২ মিলিয়ন ডলারে। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঘাটতির বিষয়টি আরও প্রকট। বাংলাদেশের রপ্তানি আয় এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। কিন্তু এর মূল কারণ তুলা এবং সুতার দাম বৃদ্ধি। এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরে আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘাটতির প্রতিফলন দেখা যাবে বৈদেশিক মুদ্রা মজুতে, যেটি ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের ওপর চাপ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা।