রেল সংস্কৃতি ও সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ
আমাদের বাল্যকালে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় আসার কোনো সরাসরি রাস্তা ছিল না। আসতে হতো ময়মনসিংহ হয়ে রেলপথে। সেই ছোটবেলায় রেলভ্রমণ আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দদায়ক ও কৌতূহলোদ্দীপক ছিল। রেলে ইঞ্জিন ছিল বাষ্পচালিত। ডিজেল ইঞ্জিন আসার পরে রীতিমতো উৎসব শুরু হয়ে যেত। ওই সময়ে রেলস্টেশন ছিল বিনোদনের জায়গা। যেখানে বই, দৈনিক পত্রিকা আর ছিল একাধিক চায়ের স্টল। ছাত্রাবস্থায় বৈকালিক ভ্রমণের জন্য স্টেশনগুলো ছিল আদর্শ জায়গা। রেলওয়েকে কেন্দ্র করে একটি ইনস্টিটিউট থাকত, যাকে বলা হতো রেলওয়ে ইনস্টিটিউট। যেখানে বিভিন্ন সময় নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। স্টেশনে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের আগমন ও বিদায়ের সুযোগে প্রায়ই স্টেশনে ছিল মানুষের আনাগোনা।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেই সংস্কৃতিটা বিদায় নিতে শুরু করল। প্রথম দিকে রেলের বড় ধরনের উন্নতির লক্ষণ দেখা গেলেও ১৯৭৫-এর পর বড় বড় রেল কারখানা ধুঁকতে থাকে, রেলের সংখ্যা কমতে থাকে। রেলপথের পরিবর্তে আসে মোটরগাড়ি, বাস, মিনিবাস থেকে শুরু করে যাত্রী পরিবহনের জন্য অটোমোবাইলের ব্যবস্থা। রেললাইন সম্প্রসারণের কাজ প্রায়ই বন্ধ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে অবশ্য কিছু দ্রুতগামী ট্রেনের ব্যবস্থা হয় বটে, কিন্তু অন্য লোকাল ট্রেনগুলো বা মাঝারি পাল্লার ট্রেনগুলো বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়। আশির দশকে বড় বড় দাতা সংস্থার কল্যাণে বড় বড় হাইওয়ে নির্মাণ শুরু হয়। নির্মাণকাজগুলো গত ত্রিশ-চল্লিশ বছর ধরে চলছে।