বিরস শুভেচ্ছা বিনিময় ও জোটের জটিল রাজনীতি
আমাদের রাজনীতিকেরা ঈদকে গণসংযোগের উপলক্ষ হিসেবে নেন। তাঁরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করেন। মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেন, তাঁদের অভাব-অভিযোগ শোনেন। অতীতে মত ও পথের যত পার্থক্যই থাকুক না কেন, তাঁরা ঈদের সময় পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। এখন সেই রীতি প্রায় উঠে গেছে। এখন সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতেও এক দলের নেতা গেলে অন্য দলের নেতা যান না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ৩৩ মাস পর ঈদের দিন নিজ নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে গেছেন। সেখানে তাঁর ছোট ভাই ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র মির্জা আবদুল কাদেরের দেওয়া ক্রেস্ট উপহার নিয়েছেন। এই উপহার প্রদান অনুষ্ঠানে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উপস্থিত থাকলেও মির্জার প্রতিপক্ষ গ্রুপের কেউ ছিলেন না। আবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান আয়োজিত ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে মির্জার অনুসারীরা গরহাজির ছিলেন।
সেদিনের সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিএনপিকে নিয়ে দেশবাসীকে একটি ‘সুসংবাদ’ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির আন্দোলনের কথা শুনে মানুষ এখন হাসে। তারা গত ১৩ বছরে ২৬ বার আন্দোলনের ডাক দিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। ভবিষ্যতেও সফল হবে না।’ আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা সব সময় বলে আসছেন, বিএনপির আন্দোলন করার মুরোদ নেই। তারা জনগণ দ্বারা পরিত্যক্ত। যে দলের আন্দোলন করার মুরোদ নেই ও জনগণ দ্বারা পরিত্যক্ত, সেই দল নিয়ে তাঁরা এত বিচলিত কেন?
নোয়াখালীতে ওবায়দুল কাদেরের ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের খবর যখন গণমাধ্যমে দেখলাম, তখন বরিশালে ভিন্ন ধরনের শুভেচ্ছা বিনিময়ের খবর নজরে এল। বরিশাল-১ আসনের সাবেক সাংসদ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দিন স্বপন ঈদের দিন নিজ নির্বাচনী এলাকায় যেতে চেয়েছিলেন স্বজন ও দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে। এই বার্তা রাষ্ট্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার সরিকল বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েক শ নেতা-কর্মী সমাবেশ করে তাঁকে প্রতিরোধের ঘোষণা দেন। এ অবস্থায় সহিংসতা এড়াতে জহির উদ্দিন স্বপন বাড়িতে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল করেন। এর আগেও এমনটি হয়েছে। একে বলা যায় বিরস শুভেচ্ছা বিনিময়।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়
- রাজনীতিক