প্রিয় গ্রহের জন্য সামান্য বিনিয়োগ
অনন্ত বালা দাশ। রক্তি নদীর ধারে বাড়ি ছিল তার। সামনে নীলকণ্ঠ ফুলের মতো টকটকা মেঘালয় পাহাড়। প্রতিবার খাওয়ার আগে তিনি মাটিতে এক লোকমা ভাত-শাক ছড়িয়ে দিতেন। পিতলের ঘটি থেকে ছিটিয়ে দিতেন জল। রামায়ণ পাঠের আসর থেকে ফেরার সময় দেখেছি, পথের বিড়াল-কুকুরছানাদের জন্য পুুঁটলি থেকে এক মুঠ খাবার রেখে যেতেন 'সযতনে'।
'সযতনে' বিশেষণটি আমার শৈশবের উপলব্ধি নয়; এখন এই বয়সে মনে হয়েছে। কাক-চড়ূইদের ভাত না ছিটিয়ে তিনি অন্ন গ্রহণ করতেন না। নিজের স্নান সেরে প্রথমেই তুলসী গাছকে স্নান করাতেন। আর তার ছিল এক বিস্ময়কর ছোট্ট বাগান। রাজ্যের মানুষ এই লতা, সেই পাতা, ওই শিকড় নিতে ভিড় জমাত।
তাকে জিজ্ঞেস করতাম, এমন কেন করো, ঠাকুমা? বাতাসে পান-সুপারির ঘ্রাণ ছড়িয়ে বলতেন, 'জগৎ জননীর কাছে বাঁচবার ঋণ শোধ করিরে।' অনন্ত বালা দাশের সেই জটিল উত্তর আমি শৈশবে বুঝতে পারিনি। এখনও এর মর্ম ধারণ করতে পারিনি। জগৎ জননীর কাছে ঋণ! কী আমাদের ঋণ এই জগৎ জননীর কাছে? আজ যখন পরিবেশ, প্রতিবেশ, রাজনীতি কিংবা জলবায়ু সংকট নিয়ে তুমুল তর্ক উঠছে, তখন আমার একজন অনন্ত বালা দাশের কথা মনে পড়ে। তার জীবনযাপন, দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা পৃথিবীর প্রতি দায়িত্ববোধ আজ বিস্ময় জাগায়।