প্রযুক্তি উপযোগী বাংলা ভাষা কতদিনে?

সমকাল সুধীর সাহা প্রকাশিত: ০৫ এপ্রিল ২০২২, ১০:৩৭

শাসক যে ভাষায় প্রশাসন পরিচালনা করে, সে ভাষাই দেশের শিক্ষা, বাণিজ্য, অর্থনীতির প্রধান বাহক হয়ে ওঠে এবং ক্রমেই তা ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে চাইলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। মোগল শাসনতন্ত্রের প্রভাবে ফারসি ভাষার চর্চা প্রথমে সরকারি এবং ক্রমে সামাজিক আভিজাত্যের অঙ্গ হয়ে ওঠে। এর পর যখন পুরোপুরি ইংরেজ শাসন শুরু হলো, তখন আদালত বা দলিল ফারসি ভাষায় হওয়ায় সেই সময়ে ইংরেজরা পড়ল মুশকিলে। অন্য সব প্রদেশের মতো বাংলার সমস্যাও তখন ত্রিমুখী- প্রশাসনের ভাষা ফারসি, দেশটা বাংলা, শাসক ইংরেজ।


সমাধানের চেষ্টায় ১৮৩৭ ও ১৮৪৩-এর আইন দ্বারা আদালত থেকে ফারসি ভাষা তুলে দেওয়া হলো। যাবতীয় কাজকর্ম বাংলায় করার নির্দেশ গেল জেলা আদালতে। এর ফলে সেদিন ফারসি জানা ক্ষমতাবান শিক্ষিত শ্রেণি ক্ষুব্ধ হয়েছিল। কিন্তু এমন উদ্যোগ সেদিন সফল হতে পারেনি। ইংরেজ শাসকদের ভাষার কারণে ইংরেজি ভাষাই সবকিছুর মাধ্যম হয়ে উঠেছিল। ১৯৪৭ সালের পর পূর্ববাংলায় শুরু হয়েছিল ইংরেজি, বাংলা এবং উর্দু সংমিশ্রিত স্রোতধারার স্পষ্ট রেখা। যেহেতু পাকিস্তানের শাসকের প্রশাসনিক ভাষা উর্দু, তাই পূর্ববাংলার ভাষায়ও এসে গেল সেই উর্দুর প্রভাব। বহু বছরের অভ্যাসগত শিক্ষিত শ্রেণির মুখে রয়ে গেল ইংরেজি ভাষাটা।
তবে পশ্চিমবঙ্গে ঘটে গেল অন্য দৃশ্য। ১৯৪৭ সালে পশ্চিমবঙ্গে প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষকে তার মুখ্য সচিব সুকুমার সেন বাংলা ভাষায় নোট দিতে শুরু করেছিলেন। ১৯৫৭-তে বিরোধী দলনেতা জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়কে বলেছিলেন, ইংরেজি না জানার ফলে অনেক জনপ্রতিনিধিই বিধানসভায় যথার্থ অর্থে প্রতিনিধিত্ব করতে পারছেন না। তারা বুঝতেই পারছেন না, কী বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এদিকে পূর্ববঙ্গে তখন রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা চাহিদার রমরমা আয়োজন চলছিল। ১৯৫২-এর বাংলা ভাষা আন্দোলন তখন তুমুল শক্তি সঞ্চয় করছিল পূর্ব পাকিস্তানে।


অনেক দেশ দেখলে তাজ্জব বনে যেতে হয়। অনেক দেশই শুধু মাতৃভাষার ওপর অহংকার করে তাকে আঁকড়ে ধরে সফলতার সঙ্গে বেঁচে আছে। ইউরোপের দেশগুলো যেন তা বিশ্বের সবাইকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশও তেমন। বাঙালি জাতি তার মাতৃভাষাকে গর্বের সঙ্গে প্রতিদিনের রোজনামচা, কাজ ও আবেগে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছে তাদের চর্চা ও মননে। সেই চর্চা আর আবেগের হাত ধরেই 'একুশে ফেব্রুয়ারি' পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এখন তা শুধু ভাষা দিবসই নয়; দাঁড়িয়ে গেছে আরও উচ্চ মার্গে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে। সে কথা স্মরণ করেই বলতে ইচ্ছা হয়- আমরা যেন পশ্চিমবঙ্গের মতো ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু এসবকেও গুলিয়ে না ফেলি।


বাংলা ভাষার বয়স খুব বেশি নয়। বাংলা গদ্যের বিবিধ বিস্তারের পরিসরটি গড়ে ওঠে আরও পরে। ক্রমে তা সাহিত্যের বাহন ও জ্ঞানচর্চার উপকরণ হয়ে উঠতে থাকে। বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রাক-আধুনিক ও আধুনিক পর্বে এক রকম ছিল না। যখন ছাপাখানা আসেনি, সমুদ্র ডিঙিয়ে আসা সাহেব-বণিকরাও এদেশে দৃঢ়ভাবে উপনিবেশ স্থাপন করেনি, তখনও বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠিত ছিল। সেই সময়ে প্রথমত রাজপৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিল এই ভাষা। আরাকান রাজসভা থেকে কৃষ্ণচন্দ্রের সভা- এলিটদের কাছে ভাষা হিসেবে বাংলা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, এই স্থানীয় ভাষাকেন্দ্রিক উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন গোষ্ঠীটি যেমন বাংলা ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি করেছিল, তেমনই প্রাক-আধুনিক পর্বের ধর্মীয় ও লোকায়ত স্তরেও ভাষাটির প্রয়োগ ছিল যথেষ্ট। এর পর সাহেবদের বাণিজ্য ও প্রশাসনিকতা আঠারো শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ক্রমে ঔপনিবেশিক ব্যবস্থাপনাকে সুদৃঢ় করতে বাংলা ভাষা ব্যাপক প্রসার লাভ করে। তখনই বাংলা ছাপাখানার পত্তন হয়; বাংলা গদ্য নানা শাখায় বিস্তার লাভ করে। এই ঔপনিবেশিক ব্যবস্থায়ই উনিশ শতকে বাঙালি ভদ্রলোক শ্রেণির ক্রম উত্থান ঘটে। এই ধারাবাহিকতায় বাংলা ভাষার সামনের সারিতে চলে আসেন রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র, হেমচন্দ্র, রঙ্গলাল, মধুসূদন প্রমুখ বিদগ্ধজন। সেই সময়ে তারা সবাই ছিলেন ইংরেজি শিক্ষিত। তারা বাংলা ভাষার জন্য ভাবছেন, লিখছেন। ফলে সেই উদাহরণগুলো বাংলা ভাষাকে ভাবের পাশাপাশি জ্ঞানের ভাষায় রূপান্তরিত হতে সাহায্য করেছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও