জ্বালানি সাশ্রয়ে জোর দিতে হবে
করোনাকালে বিশ্বে জ্বালানি পণ্যের দাম অনেক কমে গিয়েছিল। কারণ, লকডাউন। করোনার দাপট শেষে বিশ্বে পরিবহনসহ মিল-কারখানা আবার সচল হয়। তেল-গ্যাস-কয়লার দামও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই জ্বালানি পণ্যে 'আগুন' ধরিয়ে দিয়েছে। রেকর্ড দরে এখন জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লা বিক্রি হচ্ছে। বলতে গেলে, এই জ্বালানিকে কেন্দ্র করে 'বিশ্ব অর্থনৈতিক যুদ্ধ' শুরু হয়েছে। এই যুদ্ধের শেষ কোথায়, তা অনুমান করা বেশ কঠিন।
বিশ্বে জ্বালানি পণ্যের এই আকাশছোঁয়া দাম অন্যান্য খাদ্যপণ্যের ওপরেও ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। চাল-ডাল, আটা-ময়দা, ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপক বেড়েছে। নিদারুণ কষ্টে পড়েছে নিম্ন আয় ও সীমিত আয়ের মানুষ। টিসিবির ট্রাকের পেছনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কমমূল্যে পণ্য পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। সংকট মোচনে সরকার ভ্যাট, শুল্ক্ক প্রত্যাহারসহ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবুও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিশ্বের জ্বালানি তেলের বাজার সব সময় এক রকম থাকে না। নানা কারণেই ওঠানামা করে। প্রশ্ন হলো, যখন দাম কম থাকে, তখন কেন বেশি আমদানি করে আমরা সংরক্ষণ করে রাখি না? কম দামে কিনে ডিপোতে রাখতে পারলে তাতে লাভবান হওয়া যায়। বিশ্ববাজারে যখন দাম বেশি থাকবে, তখন আমরা আমদানি না করেও ডিপো থেকে খরচ করতে পারি। তাহলে এই সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হয়।
এই সংকটটা আসলে অত্যন্ত গভীর ও জটিল। মূলত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতার কারণেই বছরে বারবার আমাদের এই দুর্ভোগে পড়তে হয়। সেই কারণটা এখন একটু ব্যাখ্যা করি। জ্বালানি তেল আমদানিকারক একমাত্র সরকারি সংস্থা হলো বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসি। সংস্থাটি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নামে তিনটি কোম্পানির মাধ্যমে এই তেল বাজারজাত করে থাকে। সারাদেশে এই জ্বালানি তেল সংরক্ষণ করার জন্য বিভিন্ন স্থানে ডিপো আছে। এসব ডিপোর মজুত ক্ষমতা মোট ১৩ লাখ টন, যা দিয়ে মাত্র ৩৫ দিনের চাহিদা মেটানো যায়। সারাদেশে বছরে ৬৫ লাখ টন তেল ব্যবহূত হয়। ফলে বিশ্ববাজারে দাম যাই-ই থাকুক, বছরব্যাপী তেল আমদানি করতে হয়। নতুবা দেশে সংকট দেখা দেয়। এই ডিপোতে সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়ানো গেলে সরকার লাভবান হতে পারত। কিন্তু এ বিষয়ে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ বিপিসির নেই বললেই চলে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- জ্বালানি
- অপচয় রোধ
- ইউক্রেন সংকট