বাংলায় উচ্চশিক্ষা ও বিজ্ঞানচর্চার প্রয়াস আরও বেগবান হোক
একটি দেশের মাতৃভাষা তার অহঙ্কার। এ যাবৎ, বিশ্বে ২৫টি ভাষায় সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে এবং তার মধ্যে বাংলা ভাষা একটি। এ ভাষায় কথা বলে প্রায় ২৮ কোটি বাঙালি। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষায় রূপ দিয়েছিল। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবেও বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে। এমনকি জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করারও দাবি উঠেছে। এরপরও কি দেশে বাংলা ভাষাকে জীবনের সর্বস্তরে আমরা চালু করতে সক্ষম হয়েছি?
বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের বিষয়ে ছিলেন আপসহীন। যে জাতি তার নিজ ভাষায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে উন্নত, সে জাতি তত অগ্রগামী। সে জাতি মাথা উঁচু করে সমগ্র বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ভাষাকে সমুন্নত রাখার সেই সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স প্রায় একান্ন বছর। সরকার ও প্রশাসনের সব দাপ্তরিক আদেশ, ঘোষণা বাংলা ভাষায় তৈরি হলেও দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করা এখনো সম্ভব হয়নি। উচ্চ আদালতের রায়গুলো এখনো অধিকাংশ ইংরেজিতেই লেখা হয়। আমার প্রশ্ন, দেশের কজন বিচারপ্রার্থী ইংরেজিতে লেখা সেই রায়ে কী বলা হলো, তা বুঝতে পারবেন? আইন-আদালতের ক্ষেত্রে মক্কেলদের ভাষার বাইরে যাওয়াটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, এমনকি অগণতান্ত্রিক। যদিও সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানসহ হাইকোর্টের কয়েকজন বিচারক বিভিন্ন মামলার রায় দিয়েছেন বাংলায়। সম্প্রতি হাইকোর্ট একটি মামলার রায় বাংলায় লিখে ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রশংসিত হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, দেশের সুপ্রিমকোর্টের রায় অচিরেই বাংলায় দেওয়া হবে, সেজন্য কাজ চলছে। আদালতের রায় বাংলায় দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে বিভিন্ন আইনি পরিভাষা, যেগুলোর যথাযথ প্রতিশব্দ বাংলায় তৈরি হয়নি।