বৃদ্ধ বয়সে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক
জীবন চলার পথে অনেকগুলো সম্পর্ক আমাদের সামনে হাজির হয়। ছেলেমেয়ের সম্পর্ক, মা-বাবার সম্পর্ক, ভাই-বোনের সম্পর্ক, বন্ধু-বান্ধবের সম্পর্ক, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, সামাজিক সম্পর্ক, পাড়া-প্রতিবেশীর সম্পর্ক, আত্মীয়স্বজনের সম্পর্ক, প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্ক, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ইত্যাদি। আজ শুধু বৃদ্ধ বয়সে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে কথা বলব।
আমরা যখন প্রবীণ হই, তখন ধরে নিই আমরা অকর্মণ্য। সমাজ প্রবীণ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে বিধায় প্রবীণ নিজেও বিশ্বাস করতে শুরু করে, প্রবীণ মানে অকর্মণ্য। প্রবীণ বয়সে আয়-রোজগার কমতে থাকে। অসুখ-বিসুখ, রোগবালাই বাড়তে থাকে। পাল্লা দিয়ে খরচ বাড়ে। খোঁজখবর নেওয়ার লোক কমে যায়। ডাক্তারের চেম্বার অথবা হাসপাতালে কে নিয়ে যাবে, কার সময় হবে, এ নিয়ে ভাবনা শুরু হয়। সন্তানদের কাছে থাকার সৌভাগ্য অনেকেই পান না। কারও সন্তান বিদেশে কিংবা অন্য শহরে কাজ করেন, সে জন্য থাকা হয় না।
কেউ সন্তানের সঙ্গে থাকেন আবার কেউ থাকেন না। প্রবীণ স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক উপরিউক্ত পরিস্থিতিতে ভিন্নমাত্রা পায়। যাঁরা যৌবনে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে মর্যাদা দিয়েছেন, যত্ন করেছেন, শ্রদ্ধা করেছেন, তাঁরা বৃদ্ধ বয়সে এসে তুলনামূলক কম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। তাঁদের বার্ধক্য শান্তিপূর্ণ এবং স্বস্তিদায়ক হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। যাঁরা যৌবনে ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি, সন্দেহ, অবিশ্বাস, অশ্রদ্ধা, অসম্মান করে কাটিয়েছেন, তাঁরা কমবেশি সবাই বৃদ্ধ বয়সে নানা রকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা খুবই কঠিন।
আমি মনে করি, বৃদ্ধ বয়সটা একজন মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। জীবিকা অর্জনের জন্য কাজ খুঁজতে হয় না। কাজ হারানোর ভয় থাকে না। কর্মক্ষেত্রে কাউকে সমীহ করে চলতে হয় না। কারও মন রক্ষার জন্য নাটক করতে হয় না। পদোন্নতির জন্য হাহাকার নেই। যাঁরা পদোন্নতি পেলেন, তাঁদের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ নেই। বদলির আতঙ্ক নেই। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে তেল মারার, গুণগান করার দরকার হয় না। সত্যিকার অর্থে একজন মুক্ত মানুষ। ফলে বার্ধক্যকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে পারা আনন্দের। সেই আনন্দ মাটি হয়ে যাবে যদি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক তিক্ত হয়। আমরা যৌবনে এমন ভান করি, যেন সংসারের যাবতীয় কাজ মাথায় বয়ে বেড়াচ্ছি। আর সবাই বসে বসে খাচ্ছে। অন্যরা গুরুত্বহীন, শুধু আপনি নিজে গুরুত্বপূর্ণ—এমন ভাবটা কমবেশি সবার মধ্যেই লক্ষ করা যায়। অনেকেই আক্ষেপ করেন পরিবার-পরিজনের জন্য অনেক করেছেন; কিন্তু নাম পাননি। আপনাকে এসব করতে কে বলেছে? আসলে আপনি সংসারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে চেয়েছিলেন। দণ্ড-মুণ্ডের মালিক হতে চেয়েছিলেন। পারেননি, তাই আক্ষেপ, বিলাপ, অভিশাপ।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বৃদ্ধ বয়স
- স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক