বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করেই কেন আন্দোলন থামাতে হয়?
এ দেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সৃষ্টি এবং তাতে শরিক হওয়ার ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। সেই ইতিহাস আদতে বাংলাদেশের জন্মের চেয়েও পুরোনো। ইতিহাসবিদেরা প্রায়ই বলে থাকেন, ছাত্র আন্দোলনের কারণেই এ দেশের স্বাধীকারের সংগ্রাম গতি পেয়েছিল। আর এমন ঐতিহ্য থাকা এক দেশেই এখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পেটানোর ছবি সংবাদমাধ্যমের পাতায় বড় করে ছাপা হয়। সেই সঙ্গে শিরোনামে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও হল ছাড়ার ঘোষণার কথা। কিন্তু আন্দোলন হলেই কেন শিক্ষার্থীদের বের করে দিতে হবে?
এই প্রশ্নের উত্তরে নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শোনাবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জানমালের নিরাপত্তা, শিক্ষার্থীদের কথিত ‘উগ্র’ মনোভাব, ‘অহেতুক’ আন্দোলন ইত্যাদি ইত্যাদি। হ্যাঁ, তা বলতেই পারেন। তবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের এমন আন্দোলনের খবর এখন বেশ নিয়মিত বিরতিতেই পাওয়া যায়। সেগুলোর ময়নাতদন্ত করলে কিছু চিত্র বেশ স্পষ্ট এবং নিয়মিত আমাদের সামনে ধরা দেয়। প্রথমত, আন্দোলনের শুরুর দিকে কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ পাত্তা দিতে চায় না। দ্বিতীয়ত, কখনো কখনো একধরনের সাময়িক পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং তার পরেই শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনের পরিধি বিস্তৃত করে। তৃতীয়ত, এর ঠিক পরপরই আন্দোলনরতদের ওপর বলপ্রয়োগের, বিশেষ করে লাঠিপেটার খবর মেলে। তাতে যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া যায়, তেমনি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের অংশগ্রহণেরও চিত্র দেখতে হয়। এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন আরও জোরদার হওয়ার ইঙ্গিত পেলে আসে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা, হল ত্যাগ করার নির্দেশ।
ঠিক এমনটাই দেখা যাচ্ছে এখন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি)। সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, অসদাচরণের অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে গত শনিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনরত ছাত্রীদের ওপর হামলা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আন্দোলন চলাকালে গত রোববার সন্ধ্যায় পুলিশের লাঠিপেটায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।