আন্তর্জাতিক নতুন সমীকরণে আফগানিস্তান
আফগানিস্তানে যা ঘটেছে তার তুলনা করা হচ্ছে ভিয়েতনামের সঙ্গে। শত্রুপক্ষের হাতে পতন ঘটছে এমন এক শহর থেকে মার্কিন নাগরিকদের হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার করে নিয়ে আসতে হচ্ছে, সংবাদপত্রগুলোর পক্ষে এ রকম ছবি প্রথম পাতায় ছাপানোর লোভ সামলানো বেশ কঠিন। তবে বাস্তবে, এই দুটি ঘটনায় ওপরে ওপরে যত মিলই থাক কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যও কিন্তু আছে। দক্ষিণ ভিয়েতনামের পতন ঘটেছিল মার্কিন সৈন্যরা চলে যাওয়ার দুই বছর পর। মনে হচ্ছে আফগানিস্তানের বেলায় যুক্তরাষ্ট্র আশা করেছিল, তারা চলে আসার পরও তাদের আফগান মিত্ররা মার্কিনিদের ছাড়াই আরও বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা সময় ধরে টিকে থাকতে পারবে। সুদূর অতীত থেকেই আফগানিস্তান বিভিন্ন দেশ ও আগ্রাসী শক্তির দ্বারা আগ্রাসন ও দখলদারির শিকার হয়েছে। ব্রিটেন থেকে রাশিয়া এবং সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রও আগ্রাসন চালিয়েছে। তবে কোনোকালেই তারা দখলদারি টিকিয়ে রাখতে পারেনি। প্রতিরোধের মুখে একটা সময় তাদের বিদায় নিতে হয়েছে। সেসব বিদায় সুখকর হয়নি এবং দখলদারি থেকেও তাদের কোনো লাভ হয়নি। পরাজয়ের গ্লানি নিয়েই ফিরতে হয়েছে। ২০০১ সালে নাইন-ইলেভেনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র জোট তৎকালীন তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে সাঁড়াশি আক্রমণ চালিয়ে তালেবান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। পরে যুক্তরাষ্ট্র তার নিয়ন্ত্রণাধীন একটি পুতুল সরকার গঠন করে। বিপুল অর্থব্যয়ে দেশটির সামরিক বাহিনী গঠন এবং নিজের ও ন্যাটো জোটের সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে। তালেবানকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে দমন অভিযান চালাতে থাকে। অন্যদিকে, ক্ষমতাচ্যুত তালেবান দীর্ঘ দুই দশক ধরে অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। এ সময় আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি ও তার তল্পিবাহক সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারতসহ কিছু দেশ সেখানে অবকাঠামোসহ অর্থনৈতিক বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা শুরু করে।