‘সীমান্ত বন্ধ করেছে ভারত, আমরা করলেও সমস্যা নেই’
করোনায় এখন সবচেয়ে নাকাল ভারত। দিনে তিন লাখেরও বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। ভেঙে পড়ছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। জুড়ে বসেছে ডাবল ও ট্রিপল মিউট্যান্ট ভাইরাস। যা ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, মহারাষ্ট্র ও ছত্তিশগড়েও ছড়িয়েছে। নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের ক্ষমতা তিন গুণ বেশি। বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে এটা বাংলাদেশে প্রবেশ করলে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও ধসে পড়বে। এরপরও বন্ধ হচ্ছে না ভারত-সীমান্ত।
যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, সীমান্ত বন্ধ হলেও কোনও কূটনৈতিক সমস্যা হবে না। তার দাবি, ভারত তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের তরফ থেকে কোনও সমস্যা হয়নি। আমরা করলেও তাদের সমস্যা হবে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন ফোনে শনিবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা চিন্তা করেছি। কয়েকদিন আগে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ছিল। সেখানে বিষয়টি উত্থাপন করেছিলাম।’
এখন কোনও বিমান যাতায়াত করছে না। কিন্তু স্থল ও নদীপথ উন্মুক্ত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বেনাপোল দিয়ে লোকজন আসা যাওয়া করছে।’
ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের
ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় এবং সেখানে শনাক্ত করোনার নতুন ধরনটির প্রবেশ ও ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে প্রতিবেশী এই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির এক সভাতেও ভারতে সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত সীমান্ত বন্ধ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ভারতে সংক্রমণ পরিস্থিতি মারাত্মক হওয়ায় আমরা অবিলম্বে সরকারকে সীমান্ত করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম।’
‘সীমান্ত যদি পুরোপুরি বন্ধ রাখা সম্ভব নাও হয়, তাহলে অবশ্যই ভারত থেকে আসা ব্যক্তিদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে’, বলেন তিনি।
ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে, তার পেছনে কোভিড-১৯’র নতুন ধরন ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ কাজ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যে কারণে দেশটি ইতোমধ্যে ব্রাজিলকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণের দেশে পরিণত হয়েছে। এখন ভারতের আগে রয়েছে কেবল যুক্তরাষ্ট্র।
করোনা : ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের দাবি বিএনপির
করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারতের সঙ্গে দেশের সবগুলো স্থলবন্দর বন্ধের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। শনিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনার ভয়ঙ্কর প্রকোপে পর্যুদস্ত সেবা পরিস্থিতি। ইতোমধ্যে ভারত বিশ্বে সংক্রমণের হারে সবার ঊর্ধ্বে। দেশটিতে সংক্রমণ মারাত্মক, সেখানকার মারাত্মক পরিস্থিতি। আমি ভারতের এ বিষয়টি এ কারণে উল্লেখ করছি যে ভারতের সঙ্গে আমাদের এখনো প্রচুর পরিমাণ ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবং স্থলপথে আমাদের নাগরিকদের যাতায়াত আছে। বিশেষ করে মেডিকেল ভিসা বা অন্যান্য কারণে।’
কোভিড: ভারতে এক দিনে শনাক্ত প্রায় সাড়ে ৩ লাখ
করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ভারতকে নিয়ে যাচ্ছে খাদের কিনারে; সংক্রমণ হু হু করে বাড়তে থাকায় প্রতিদিনই সেখানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় নতুন বিশ্ব রেকর্ড হচ্ছে।
ভারত সরকার শনিবার (২৪ এপ্রিল) দেশটিতে রেকর্ড তিন লাখ ৪৬ হাজার ৭৮৬ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছে। এ নিয়ে টানা তৃতীয় দিন ভারতে তিন লাখের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হল।
শনাক্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে রেকর্ড দুই হাজার ৬২৪ জন রোগীর মারা গেছেন বলে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
ভারতের পরিস্থিতিই বলে দেয় করোনা কত ভয়ঙ্কর হতে পারে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
ভারতে বর্তমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কার কথা জানালেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান অ্যাধানম গ্রেব্রেয়াসিয়াস। তিনি বলেন, ভারতে আবারও করোনা সংক্রমণে তিনি উদ্বিগ্ন। ভারতের এই পরিস্থিতিই বিধ্বংসী পূর্বাভাস দিচ্ছে যে ভাইরাস কী করতে পারে। অর্থাৎ ভারতে ক্রমাগত যে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ তা রীতিমতো ভয়ানক আকার নিতে চলেছে বলেই মন্তব্য করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধান।