ভ্রান্তিবিলাসমুক্ত বাংলাদেশ চাই
একাত্তরের সেই নয় মাসের কথা ভাবতেই ইংরেজ ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্সের উপন্যাস 'এ টেইল অব টু সিটিজ'-এর কথা মনে পড়ে যায়, যেখানে তিনি সেই সময়কার বিবরণ দিতে গিয়ে লেখেন- এ হচ্ছে সর্বোত্তম সময়, এ হচ্ছে সবচেয়ে খারাপ সময়; এ হচ্ছে বসন্তের প্রত্যাশা, এ হচ্ছে শীতের নৈরাশ্য। ঠিক তেমনটিই ছিল একাত্তরের সেই নয় মাসে আমাদের নিজেদের মনেই এক ধরনের বিভাজিত অনুভূতি। একদিকে আমরা ভয়াবহ এক সন্ত্রাসের মধ্যে বাস করেছি, আবার অন্যদিকে ঠিক স্বপ্ন দেখেছি স্বাধীন ও রৌদ্রকরোজ্জ্বল ভবিষ্যতের। পরাধীনতার শেকল যত জোরে আষ্টেপৃষ্ঠে আমাদের বাঁধতে চেয়েছে, ততই আমাদের স্বাধীনতার আশা ক্রমশই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
একাত্তরে আমাদের বসন্ত ও বৈশাখকে হিমেল করে তুলেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, তবে আনন্দের বিষয় হচ্ছে এই যে, ডিসেম্বরের শীতেই আমরা পেলাম বসন্তের আমেজ, বিজয়ের পথ ধরে এলো স্বাধীনতা। আমার কৈশোরিক স্মৃতিতে এখনও থেকে গেছে ভয়াবহ নিকষ কালো রাত এবং অতি অবশ্যই কালরাতের সেই সব চিত্র, যেখানে আলোর এক মাত্র উৎস ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোলাবারুদের সেই অনাকাঙ্ক্ষিত আলো, যা শুধু উজ্জ্বল করে তুলেছিল নির্মম নৃশংসতার চালচিত্র। বাঙালি জাতিকে প্রায় নয় মাস ধরেই যুঝতে হয়েছে এই নির্মমতার সঙ্গে। অবশেষে অবসান হলো সেই অমানিশার, পূর্ব দিগন্তজুড়ে উদিত হলো সেই সূর্যের, যার প্রতীক্ষায় বাঙালি থেকেছে দীর্ঘদিন। তবে এই অন্তহীন অর্জনের জন্য বাঙালির বিসর্জনের অঙ্কটাও বিশাল।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বিভ্রান্তি
- ভুলভ্রান্তি