করোনা : পরিত্রাণে সতর্কতার বিকল্প নেই
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস, যা এর আগে পৃথিবীতে মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি। এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ১০ লাখ প্রায়। মৃতের সংখ্যা পাঁচ লাখ ২৪ হাজারের বেশি। তবে সাড়ে ৬১ লাখের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখন পর্যন্ত এর কার্যকর কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। পুরো মানবজাতি এক অর্থে অসহায় এ ভাইরাসের কাছে। নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ ভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ছয়টি প্রজাতি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। তবে নতুন সংক্রমিত এ ভাইরাসের কারণে সে সংখ্যা এখন থেকে হবে সাতটি।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণত জ্বর, কাশি এবং শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা প্রধান লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়। এটি ফুসফুসে আক্রমণ করে। সাধারণত শুষ্ক কাশি ও জ্বরের মাধ্যমেই শুরু হয় এর উপসর্গ, পরে শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচ থেকে ১৪ দিন সময় নেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ভাইরাসটির ইনকিউবেশন পিরিয়ড ১৪ দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। তবে কিছু কিছু গবেষকের মতে এর স্থায়িত্ব ২৪ দিন পর্যন্তও হতে পারে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত ও সংক্রমিত মানুষ অন্যদের সংক্রমিত করে। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত উপসর্গহীন মানুষও অন্যের দেহে ভাইরাসটি সংক্রমিত করতে পারে। জ্বর দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়, এরপর শুকনো কাশি দেখা দিতে পারে। প্রায় এক সপ্তাহ পর শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। সমস্যা জটিল হলে অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়। এই রোগে ৬ ভাগ কঠিনভাবে অসুস্থ হয়- এ ক্ষেত্রে ফুসফুস বিকল, সেপটিক শক, অঙ্গবৈকল্য এবং মৃত্যুর আশঙ্কা তৈরি হয়। ১৪ ভাগ এর মধ্যে তীব্রভাবে উপসর্গ দেখা দেয়। তাদের মূলত শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা তৈরি হয়। ৮০ ভাগের মধ্যে হালকা উপসর্গ দেখা যায়- জ্বর এবং কাশি ছাড়াও কারো কারো নিউমোনিয়ার উপসর্গও দেখা যেতে পারে করোনাভাইরাস সংক্রমণে। বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের কোনো ধরনের অসুস্থতা যেমন- অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস মারাত্মক অসুস্থতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এ রোগে নারীদের চেয়ে পুরুষদের মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি। আক্রান্ত ব্যক্তি যেন শ্বাস প্রশ্বাসে সহায়তা পায় এবং তার দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যেন ভাইরাসের মোকাবিলায় সক্ষম হয়, তা নিশ্চিত করাই থাকে চিকিৎসকদের উদ্দেশ্য। গ্রীষ্মের তুলনায় শীতের মাসগেলোতে সর্দি এবং ফ্লু বেশি দেখা যায়, তবে গরম আবহাওয়া ভাইরাসের বিস্তার পরিবর্তিত করে কিনা তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
যুক্তরাজ্যের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টারা বলেছেন, ভাইরাসটির ওপর ঋতুর কোনো প্রভাব আছে কিনা, তা পরিষ্কার নয়। যদি কোনো প্রভাব থেকেও থাকে, তবে তারা মনে করেন যে সর্দি এবং ফ্লুয়ের হার কমে আসবে। গ্রীষ্মকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা যদি দ্রুত হারে নামতে থাকে, তাহলে শীতকালে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ারও আশঙ্কা থাকে।