কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার পর প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী?

বিবিসি বাংলা (ইংল্যান্ড) প্রকাশিত: ০৩ জুলাই ২০২০, ২১:০৬

নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ডাক্তাররা সাইমন ফ্যারেলকে ওষুধ দিয়ে সংজ্ঞাহীন করে রেখেছিলেন কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য। সেই কৃত্রিম কোমা থেকে জেগে ওঠার পর সাইমনের মনে আছে তিনি তার অক্সিজেন মাস্কটা ছিঁড়ে ফেলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন।

দশদিন তাকে রাখা হয়েছিল নিবিড় পরিচর্যায়। তাকে নি:শ্বাস নিতে হচ্ছিল ভেন্টিলেটারের মাধ্যমে।

"আমি অক্সিজেন মুখোশটা টেনে আমার মুখ থেকে সরিয়ে দিচ্ছিলাম আর নার্স বারবার সেটা পরিয়ে দিচ্ছিল," বলছিলেন তিনি।

ডাক্তাররা যখন তাকে কোমা থেকে জাগান, তখন কোভিড-১৯এর সবচেয়ে মারাত্মক অবস্থা তিনি কাটিয়ে উঠেছেন, কিন্তু তার ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুসের তখনও স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নেবার ক্ষমতা ছিল না। তার অক্সিজেনের দরকার ছিল।

দুই সন্তানের বাবা ৪৬ বছরের সাইমন তখন মারাত্মক প্রলাপের মধ্যে। তার শরীরে যে অক্সিজেনের দরকার সেটা বোঝার ক্ষমতা তিনি হারিয়ে ফেলেছিলেন। তার মনে হচ্ছিল এসবের কোন দরকার নেই।

"আমাকে ঠেকান দেখি," ইংল্যান্ডে বার্মিংহাম কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালের নার্সকে তিনি বারবার একথা বলছিলেন তার মনে আছে। তার নার্স বলছিলেন, আপনি শান্ত না হলে আপনার দু হাতে আমরা মেডিকেল গ্লাভস পরিয়ে দেব।

"শেষ পর্যন্ত আমার দু হাত তারা টেপ দিয়ে বেঁধে দিয়েছিল। আমি দস্তানাগুলোও ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করছিলাম। আমি কামড়ে দস্তানা ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলেছিলাম। তাদের আবার নতুন দস্তানা দিয়ে আমার হাত বেঁধে দিতে হয়েছিল।"

কোভিড-১৯ যাদের গুরুতরভাবে অসুস্থ করেছে, যাদের বেশ কিছুদিন ভেন্টিলেটারে থাকতে হয়েছে এবং যাদের কড়া মাত্রায় ঘুমের ওষুধ দিয়ে রাখতে হয়েছে, সেসব রোগীর মধ্যে আইসিইউ-তে এমন লক্ষণ প্রায়ই দেখা গেছে।

লন্ডনের রয়াল ফ্রি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের ঊর্ধবতন চিকিৎসক ডা. কুলওয়ান্ত ধাদওয়াল বলছেন, "এধরনের রোগীদের মধ্যে মারাত্মক প্রলাপ বা বিকার, বিভ্রান্তি এবং অস্থিরতা আমরা দেখছি।"

"সাধারণত কারো যদি অস্ত্রোপচার হয় বা সাধারণ নিউমোনিয়া রোগীকে সংজ্ঞাহীন করা হয়, তারপর জ্ঞান ফিরলে তারা এতটা বিভ্রান্ত বা অস্থির অবস্থায় থাকে না। এই কোভিড-১৯ রোগীদের ভেন্টিলিটার থেকে বের করার পর তারা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে অনেক বেশি সময় নিচ্ছে।"

চিকিৎসকরা বলছেন, এ কাজটা সফলভাবে করা গেলেও, সেখান থেকেই শুরু হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ করে তোলার দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা রোগীদের আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া বিশাল একটা চ্যালেঞ্জ।

লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্বাসতন্ত্র এবং হৃদরোগ পুনর্বাসন বিভাগের অধ্যাপক স্যালি সিং বলছেন, "অনেকেই মনে করেন রোগীকে সারিয়ে তোলাটাই বড় কথা, ফলে রোগী আসলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছে কিনা, সেটাকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা আমরা হয়ত ভাবছি না।"

একটা বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী কোভিড আক্রান্ত হয়েছে। কাজেই এদিকটা উপেক্ষা করলে চলবে না।

দীর্ঘ পথ
বিশ্বে লাখো লাখো মানুষ এখন এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিচ্ছে।

অনেকে মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে ইনটেনসিভ কেয়ারে চিকিৎসা নিয়েছে, অনেককে হয়ত অতটা কঠিন সময় পার করতে হয়নি, অবস্থা গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছনর আগে হাসপাতালে অক্সিজেন চিকিৎসা তাদের সেরে উঠতে সাহায্য করেছে। কিন্তু কোভিড-১৯ এদের সবার জীবনকে বদলে দিয়েছে।

কিন্তু গুরুতর অসুস্থ হয়ে যাদের নিবিড় পরিচর্যায় যেতে হয়েছে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে তাদের পুনর্বাসন কীভাবে হবে, সেটা তারা কোমা থেকে জেগে ওঠার আগেই শুরু করা উচিত। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য তাকে সাহায্য করার কাজটা সেই সময় থেকেই শুরু করতে হবে।

তারা বলছেন, যখন গুরুতরভাবে আক্রান্তরা সংজ্ঞাহীন অবস্থায় আছে, সে অবস্থাতেই নার্স ও বিশেষজ্ঞদের রোগীর পেশী ও হাড়ের জয়েন্টগুলো সচল রাখতে বিশেষ ব্যায়াম করাতে হবে। নাহলে দীর্ঘসময় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় থাকার কারণে তার শরীর খুব শক্ত হয়ে যাবে।

ইংল্যান্ডে প্লিমাথ শহরের ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের বিশেষজ্ঞ নার্স কেট ট্যানটাম বলছেন, "যেমন, কাউকে যদি ভেন্টিলেটারে রাখা হয়, বা তার বিভিন্ন অঙ্গ যন্ত্রের সাহায্যে কৃত্রিমভাবে চালু রাখা হয়, এমনকী পাশাপাশি তাকে বাঁচিয়ে রাখতে যদি নানাধরনের ওষুধ তার শরীরে বিভিন্ন নলের মাধ্যমে প্রবেশও করানো হয়, তেমন অবস্থাতেও তাদের ব্যায়াম করার বিশেষ সাইকেল যন্ত্রে তোলা সম্ভব।

"যন্ত্রে রোগীর পাদুটো বসিয়ে দিলে বাকি কাজটা যন্ত্রই করবে। তাতে করে রোগীর পেশী, হাড়, অস্থিমজ্জা সব কিছু সচল রাখা যাবে, সেগুলো কঠিন হয়ে যাবে না।"

ডা. কুলওয়ান্ত ধাদওয়াল বলছেন, আইসিইউতে সংজ্ঞাহীন বা কড়া ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা রোগীদের সাথে তার সহকর্মীরা অনবরত কথা বলেন। তাদের বলা হয় তারা কোথায় আছে, তাদের নিয়ে কী করা হচ্ছে, তাদের আশ্বাস দেয়া হয় যে তারা নিরাপদে আছে।

"তাদের যখন জ্ঞান ফিরবে তখন রোগীর মানসিক অবস্থার জন্য এগুলো খুবই জরুরি। কোন কোন রোগী জ্ঞান ফেরার পর এমনও বলেছেন, 'ও আপনার কণ্ঠ আমার মনে আছে', তারা কিছু স্মৃতি নিয়ে জেগে ওঠে," বলছেন ডা. ধাদওয়াল।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও