ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে কাজে আগ্রহী অধিকাংশ মন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন প্রকাশিত: ০২ জুলাই ২০২০, ১১:৫০

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সচিবালয়ের দফতরে অফিস করার থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে কাজ করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন অধিকাংশ মন্ত্রী। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে মন্ত্রীরা ভার্চুয়াল অফিসের দিকে ঝুঁকছেন। তারা ই-ফাইলিং পদ্ধতিতে ফাইল ছাড়ার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে যেসব ফাইল ই-ফাইলিংয়ে ছাড় করা সম্ভব নয়, সেসব ফাইল নিজ বাসভবনে নিয়ে যাচ্ছেন মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত স্টাফরা। মন্ত্রীরা বাসায় বসে সেসব ফাইল দেখে ছাড় করছেন। অপরদিকে মন্ত্রণালয়ের মিটিং বা কোনও নির্দেশনাও দিচ্ছেন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। ভার্চুয়াল মিটিংয়ের মাধ্যমে যে কোনও নির্দেশনা বা মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে।

জানা গেছে, গত ৩১ মে রবিবার থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত এই ২৯ দিনে সরকারের কোনও মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী সাপ্তাহিক ছুটি বাদ দিয়ে বাকি কর্মদিবসগুলোয় মন্ত্রণালয়ের দফতরে শতভাগ উপস্থিত হননি। জরুরি কোনও মিটিংয়ে অংশ নিতে বা জরুরি কোনও ফাইল দেখতে কেউ সপ্তাহে তিনদিন, কেউ এসেছেন একদিন, আবার কেউ এসেছেন সপ্তাহে ২ দিন। বেশিরভাগ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী বাসায় বসে মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে দাফতরিক কাজ কর্ম সেরেছেন।

প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, মন্ত্রীর একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিব, মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশিদিন সচিবালয়ের দফতরে এসে অফিস করেছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তিনি সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই সচিবালয়ে নিজ দফতরে এসেছেন। যেদিন মন্ত্রণালয়ে আসেননি, সেদিন হয়তো তিনি অফিসের বাইরে কোথাও কোনও মিটিং বা পরিদর্শনে গেছেন। এই করোনা পরিস্থিতিতে তিনি পূর্বরাজারের লকডাউন পরিস্থিতি দেখতে স্বশরীরে সেখানে গেছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

অপরদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানও সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই পরিকল্পনা কমিশনের নিজ দফতরে অফিস করেছেন। বাজেট, এনইসি, এডিপি চূড়ান্তকরণ এবং একনেক মিটিংয়ে অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে থেকে। মিটিং শেষ করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এসে সাংবাদিকদের ব্রিফিংও করেছেন।

এরপরই রয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তারা দুজনই অফিস খোলার দিন ঢাকায় অবস্থান করলেই সচিবালয়ে এসেছেন, মিটিং করেছেন, ফাইল দেখেছেন, সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তথ্যমন্ত্রী সচিবালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। যেদিন সচিবালয়ে আসেননি সেদিন হয়তো তথ্যমন্ত্রী দলীয় অফিসে গেছেন। এই করোনাকালে তারা দুজনই তাদের নিজ সংসদীয় এলাকা চট্টগ্রামেও গেছেন। তথ্যমন্ত্রী সচিবালয়ের বাইরে দলের যে কোনও কর্মসূচিতেও অংশ নিয়েছেন এই করোনাকালে।

সরকারের সিনিয়র ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক করোনায় আক্রান্ত। তিনি বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। তার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত সোমবার (২৯ জুন) মারা গেছেন। এসব কারণে তিনি অনেক দিন ধরেই মন্ত্রণালয়ে নিজ দফতরে আসেন না। তবে বাসায় থেকেই সরকারি কাজ করেছেন। ফাইল দেখছেন, সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও কারোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন প্রায় ১১ দিন। বর্তমানে তিনি বাসায় কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। এর আগে অবশ্য প্রয়োজন বা জরুরি কোনও সভা থাকলেই সচিবালয়ে নিজ দফতরে এসেছেন। তিনি সপ্তাহের প্রতিদিন সচিবালয়ে আসতেন না।

সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়কমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর সিএমএইচ-এ ছিলেন। বর্তমানে তিনি সুস্থ হয়ে বাসায় কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। তবে তিনি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার আগে বান্দরবানে ছিলেন। তিনিও নিয়মিত সচিবালয়ে আসতেন না। বান্দরবান ও রাজধানীর মিন্টুরোডে অবস্থিত সরকারি বাসভবনে বসেই মন্ত্রণালয়ের কাজ করেছেন তিনি।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মূলত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই করোনাকালে নিজের সরকারি বাসভবনে থেকেই দাফতরিক ও দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই তিনি সচিবালয় বা বাসার বাইরে আসছেন না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা। ওবায়দুল কাদের আগে থেকেই অসুস্থ। তাই প্রধানমন্ত্রী তাকে বাসার বাইরে বের হতে নিষেধ করেছেন। এই সময় তিনি অনলাইনে সাংবাদিক সম্মেলনও করেছেন।
কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক সপ্তাহে মাঝেমধ্যে সচিবালয়ে আসেন। গুরুত্বপূর্ণ কোনও কাজ থাকলেই কেবল সচিবালয়ে আসেন তিনি। তা না হলে তিনি বেশিরভাগ সময় সরকারি বাসভবন থেকেই জুম প্রযুক্তি ব্যবহার করে সার্বক্ষণিক মন্ত্রণালয়ের মিটিং ও জরুরি ফাইল দেখছেন, সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জরুরি যে কোনও প্রয়োজনেই সচিবালয়ে আসেন। সরাসরি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং করেন, সিদ্ধান্ত দেন, ফাইল দেখেন। এই সময়ে তিনি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিনই সচিবালয়ে আসেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ইব্রাহিম মোল্লা। বাকি সময় রাজধানীর ধনমন্ডিস্থ বাসভবনে থেকেই দাফতরিক কাজ করছেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল করোনাকালের এই পুরোটা সময়ই ব্যস্ত ছিলেন বাজেট তৈরির কাজ নিয়ে। তাই বেশিরভাগ সময় বাসায় বসেই বাজেটের কাজ করেছেন। তবে মাঝেমধ্যেই তিনি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরস্থ পরিকল্পনা কমিশনের দফতরে গেছেন। সংসদে গেছেন। তবে বাজেট পেশের পরের দিন বাসায় থেকেই তিনি জুম প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও