চীনের জন্য তৈরি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, ঢেলে সাজাচ্ছে প্রতিরক্ষা
এ যাবত-কালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী এবং ‘আক্রমণাত্মক‘ এক প্রতিরক্ষা কৌশল তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন আজ (বুধবার) জায়গা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী একাডেমীকে।
নতুন এই প্রতিরক্ষা কৌশলের আওতায় অষ্ট্রেলিয়া তাদের সৈন্য সংখ্যা অনেক বাড়াবে, শত্রুর যুদ্ধজাহাজে আঘাত করতে সক্ষম দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কিনবে, সাইবার যুদ্ধের ক্ষমতা বাড়াবে এবং এখন থেকে তাদের প্রতিরক্ষা নীতির একচ্ছত্র নজর হবে ভারত-প্রশান্তমহাসাগরীয় এলাকা।
নতুন প্রতিরক্ষা কৌশল তুলে ধরার সময় মি. মরিসন বলেছেন - অস্ট্রেলিয়া চায় ইন্দো-প্যাসিফিক অর্থাৎ এশিয়া-প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চল থাকবে ‘মুক্ত যেখানে কোনো একটি দেশের আধিপত্য এবং জবরদস্তি চলবে না।‘
তিনি যে চীনকে ইঙ্গিত করেছেন তা নিয়ে কারোরই কোনো সন্দেহ নেই।
চীন অখুশি হতে পারে - তা নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অস্ট্রেলিয়ান রাজনীতিকদের কথাবার্তায় সাবধানতা দেখা গেছে। কিন্তু বুধবার মি মরিসন ছিলেন অনেক স্পষ্ট।
তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন, চীনের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়াকে প্রস্তুত করতে তিনি বদ্ধপরিকর।
প্রধানমন্ত্রী মরিসন বলেন, এশিয়া এবং প্রশান্ত-মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রাধান্য বিস্তার নিয়ে চীন এবং আমেরিকার মধ্যে যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তার ফলে দিনদিন উত্তেজনা বাড়ছে, এবং ‘যে কোনো সময় ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।‘
তিনি চীন-ভারত চলমান সীমান্ত বিরোধের কথা বলেছেন, এবং দক্ষিণ চীন সাগরে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তারে চীনের অব্যাহত চেষ্টার কথা বলেন।
চীন-মার্কিন এই প্রতিযোগিতায় অস্ট্রেলিয়া যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে থাকবে সেটাও স্পষ্ট করেছেন মি. মরিসন। কারণ শত শত কোটি ডলার খরচ করে আগামী বছরগুলোতে অত্যাধুনিক অস্ত্র-সম্ভার কেনার যে পরিকল্পনা তিনি করেছেন, তা আসবে প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
কি কিনবে অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়া তাদের নৌবাহিনীর জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে অত্যাধুনিক এজিএম ১৫৮ সি ধরনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কিনবে যা ৩৭০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম।
বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার কাছে যে ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে তার পাল্লা বড়জোর ১২৪ কিলোমিটার। পাশাপাশি তারা নিজেরই দূরপাল্লার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির প্রকল্প হাতে নেবে যা কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিতে পারবে। সেইসাথে চালক-বিহীন ড্রোন বিমানের সংখ্যা অনেক গুন বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
সেইসাথে সাইবার যুদ্ধ মোকাবেলার ক্ষমতা ব্যাপক মাত্রায় বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
গতকালই (মঙ্গলবার) অস্ট্রেলিয়ার সাইবার নিরাপত্তা বিভাগ নতুন ৫০০ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের পরিকল্পনার ঘোষণা করেছে। এই কাজে ১৩৫ কোটি ডলারের জোগান আসবে প্রতিরক্ষা বাজেট থেকে।
সম্প্রতি অষ্ট্রেলিয়া প্রতিরক্ষা বিভাগ এবং অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চীনা হ্যাকিংয়ের অভিযোগ করেছে।
অস্ট্রেলিয়া কেন এত যুদ্ধংদেহী
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আমেরিকান স্টাডি সেন্টারের পরিচালক এবং প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অধ্যাপক অ্যাশলে টাউন্সেন্ড ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানে লিখেছেন, অস্ট্রেলিয়ার প্রধান লক্ষ্য হলো সঙ্কট তৈরি হলে তারা যেন চীনা সেনাবাহিনী, চীনা স্বার্থ এবং অবকাঠামোতে আঘাত করতে পারে।
কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার নতুন প্রতিরক্ষা কৌশলে কার্যত স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে এশিয়া-প্রশান্তমহাসাগরে অস্ট্রেলিয়া এবং তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত এবং সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব এখন আর নেই। চীন সেখানে বড় ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে হাজির হয়েছে।
এমনকি বিভিন্ন পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে এই দশকের মাঝামাঝি পর্যায়ে গিয়ে বিভিন্ন ধরণের প্রযুক্তির গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বিনিয়োগ একত্র করলে যা হবে, চীনের একার বিনিয়োগ তা ছাড়িয়ে যাবে।
সুতরাং এই বাস্তবতা নিয়ে অষ্ট্রেলিয়া উদ্বিগ্ন।