পুরনো চামড়ার স্তূপ, নতুন চামড়া সংগ্রহে অনিশ্চয়তা
গবাদি পশুর চামড়া সংগ্রহের সবচেয়ে বড় মৌসুম ঈদুল আজহা। অন্যান্য বছর এ সময়ে চামড়া ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততার কমতি ছিল না। আসন্ন ঈদে পশুর চামড়া সংগ্রহে ট্যানারিগুলো প্রস্তুতি নিতে থাকে। এবারে চিরচেনা সে চিত্র নেই। করোনার আঘাতে বাণিজ্যিক সব ব্যস্ততাই যেন থেমে গেছে। চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের কারণে বিশ্ববাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ায় গত কয়েক মাসে প্রক্রিয়াজাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির বেশির ভাগ পুরনো অর্ডার বাতিল হয়েছে। নতুন অর্ডার নেই বললেই চলে। সাভার চামড়া শিল্প নগরীর ট্যানারিগুলোতে এখনো গত বছরে ঈদুল আজহায় সংগ্রহ করা কাঁচা চামড়া পড়ে আছে। পণ্য বিক্রি না হওয়ায় ট্যানারির মালিকরা অর্থসংকটে আছেন।
এমন পরিস্থিতিতে নতুন চামড়া সংগ্রহ নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, করোনা ব্যাধি সংক্রমণের আশঙ্কায় এ বছর কোরবানি কম হওয়ারও যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এতে চামড়া খাতে কাঁচামালের সরবরাহ কম হতে পারে।
ট্যানারি মালিকদের অভিযোগ, করোনাকালীন নানা প্রতিকূলতা ছাড়াও সাভার শিল্পনগরীতে বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যার কারণেও পশুর চামড়া সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে পারে। তাঁরা বলছেন, প্রাকৃতিক কারণে এ দেশের পশুর চামড়া গুণগতমানে ভালো। বিশ্বব্যাপী এ দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পের পর সবচেয়ে জনসম্পৃক্ত খাত চামড়াশিল্প। আমাদের দেশের চামড়া খাত মূলত রপ্তানিনির্ভর। করোনার কারণে বিশ্ববাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ায় চামড়া খাতে ধস নেমেছে। করোনা সংক্রমণ রোধে দেশে-বিদেশে লকডাউন থাকায় বেশির ভাগ কলকারখানা বন্ধ বা সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে। দোকানপাট সীমিত পরিসরে খোলা রয়েছে। সাধারণ মানুষ ঘরের বাইরে কম বের হওয়ায় বেচাকেনা কম। এতে গত ডিসেম্বর থেকেই চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা কমেছে। তাই গতবারের কোরবানির ঈদে সংগ্রহ করা পশুর কাঁচা চামড়া এখনো পণ্য তৈরিতে ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনা আমাদের চামড়া ব্যবসা শেষ করে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে কী হাল, তা সবাই দেখতে পাচ্ছে। নতুন অর্ডার নেই। প্রায় প্রতিদিনই পুরনো অর্ডার বাতিল করা হচ্ছে। গতবার ঈদে সংগ্রহ করা পশুর চামড়া এখনো ট্যানারিতে পড়ে আছে। এবারে সংগ্রহ করা চামড়া কোথায় রাখব জানি না।
চামড়া শিল্প নগরীর ট্যানারিগুলোতে বর্তমানে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার চামড়া জমে আছে।’ শাহিন আহমেদ বলেন, ‘কোরবানির পশু দুইভাবে জোগাড় হয়। এক, ঘরে পালিত পশু অনেকে কোরবানিতে বিক্রি করে। দুই, ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে পশু কিনে কোরবানির জন্য বিক্রি করে। এবারে করোনার কারণে অনেকে পশু কোরবানি নাও দিতে পারে। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে কোরবানিতে পশুর কাঁচা চামড়া সরবরাহ কম হতে পারে।’
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত বছর সারা দেশে প্রায় দুই কোটি ৩১ লাখ ১৩ হাজার গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া জবাই হয়। এর অর্ধেকই জবাই হয় কোরবানির ঈদের সময়। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া মিলিয়ে দেশে গত বছর কোরবানির ঈদে এক কোটি ১৬ লাখ ‘কোরবানিযোগ্য’ গবাদি পশু ছিল। এর মধ্যে ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার গরু ও মহিষ এবং ৭১ লাখ ছাগল ও ভেড়া।