![](https://media.priyo.com/img/500x/https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/600x315x1xxxxx1/uploads/media/2020/06/17/d03ac7ac36332df0464cea13e524d03e-5eea377148ee7.jpg?jadewits_media_id=1540368)
যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচার প্রতিবেদনে সাংসদ পাপুল প্রসঙ্গ
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক মানব পাচার প্রতিবেদনে তিন বছর পর এক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। তবে কুয়েতে মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক সাংসদ কাজী শহিদ ইসলামের (পাপুল) বিষয়টি প্রতিবেদনে এসেছে, ফলে বিষয়টির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের নজরে থাকবে বাংলাদেশ। ফলে এ নিয়ে এক ধরনের চাপে থাকতে হবে বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশ সময়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে ওয়াশিংটনে মানব পাচার বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইভাঙ্কা ট্রাম্প।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আটক সাংসদের নাম উল্লেখ না করেই কুয়েতের প্রসঙ্গটি এসেছে। এতে বলা হয়েছে, সাংসদসহ বাংলাদেশ সরকারের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাই তাদের জন্য অভিযুক্ত জনশক্তি রপ্তানিকারকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া আর অভিবাসীদের জন্য বাড়তি সুরক্ষাসহ অভিবাসনবান্ধব পরিবেশ তৈরি করাটা সাংঘর্ষিক। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুয়েতের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে বাংলাদেশের এক সাংসদ ২০ হাজারের বেশি কর্মীকে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে দেশটিতে নিয়ে যান। তিনি ওই সব কর্মীকে বিভিন্ন জায়গায় চুক্তির চেয়ে কম বেতনে চাকরির জন্য নিয়ে যান। কুয়েত নেওয়ার পর ওই সাংসদ কর্মীদের চুক্তির তুলনায় কম বেতন দিয়েছেন কিংবা কাউকে কাউকে কোনো বেতনই দেননি।
প্রসঙ্গত জুনের ৬ তারিখ কুয়েতের মুশরিফ এলাকার বাসা থেকে সাংসদ শহিদ ইসলামকে আটক করে কুয়েতের সিআইডি। এরপর তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত কর্মকর্তারা জেনেছেন সেখানকার রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তারা ঘুষ দিয়ে তিনি ভিসা বাণিজ্যের নামে মানব পাচার করেছেন। কুয়েতে বিভিন্ন জনকে নগদ ও চেকের মাধ্যমে ঘুষ দেওয়ার বিষয়টিও স্বীকার করছেন। এ ছাড়া কুয়েত থেকে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে তিনি টাকা পাচার করেছেন এমন তথ্যও পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে তাঁর এক সহযোগীর পাশাপাশি কুয়েতের বেশ কয়েকজন সরকারকরী কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। শহিদ ইসলামের ১৩৮ কোটি টাকার একাধিক ব্যাংক হিসাব এরই মধ্যে জব্দ করা হয়েছে। আর তাঁকে পাঠানো হয়েছে কারাগারে।
কুয়েতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করার পরপরই মানব পাচার বিষয়ক মার্কিন প্রতিবেদনে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ১০ জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সিন্ডিকেটের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা হয়েছে। দুই দেশের সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের ঘুষ দিয়ে বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগের বাজারটি একচেটিয়াভাবে দখলে নেয় ওই সিন্ডিকেট। মালয়েশিয়া যেতে জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা প্রত্যেকের কাছ থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। যদিও মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য সরকারের নির্ধারিত ফি ছিল ৩৭ হাজার টাকা। এর ফলে অভিবাসীরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। দুইবার সতর্ক বার্তা পাওয়ার পরে নভেম্বরে সরকার তাদের তদন্ত রিপোর্ট হাইকোর্টে জমা দেয় এবং এর শুনানি এখনো বাকি আছে।
কী বলা হয়েছে এবারের প্রতিবেদনে:
দেশের ভেতরে আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানব পাচারে বাংলাদেশিদের সম্পৃক্ততা আর এই অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো বিচার হচ্ছিল না। তাই গত তিন বছর ধরেই মার্কিন মানব পাচার প্রতিবেদনে দ্বিতীয় ধাপের নজরদারি দেশের তালিকায় আটকে ছিল বাংলাদেশ। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় বাংলাদেশে এবার তালিকায় দ্বিতীয় স্তরে উঠে এসেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর তাদের বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে বলেছে, মানব পাচার রোধের ন্যূনতম শর্ত পুরোপুরি পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে তা অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চেষ্টা চালিয়েছে। তাই বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ধাপে উন্নীত করা হলো।
প্রসঙ্গত মার্কিন ওই প্রতিবেদনে চারটি ধাপ রয়েছে। এগুলো হলে প্রথম, দ্বিতীয়, দ্বিতীয় ধাপের নজরদারি ও তৃতীয় স্তর।