উম্মাতির জন্য রাসূলের (সা.) কান্নায় ফাতিমা (রা.) দিলেন যে কোরবানি
তিন দিন হলো প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) মদিনাতে নেই। কেউ জানে না নবীজি (সা.) কোথায়। ওমর ফারুক (রা.) মুক্ত তরবারি হাতে ঘোষণা দিলেন, ‘যদি নবীজির (সা.) কোনো কিছু হয় তবে আমি ওমর বলছি মক্কার একটা মুনাফিকও আস্ত শরীরে থাকবে না।’ এদিকে আবু বকর (রা.) বললেন, থামো ভাই চলো নবীজির (সা.) তালাস করি। দুই জনে মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।
মরুভূমি পেরিয়ে পাহাড়ের এলাকাতে আসলেন। একটু দূরে দেখলেন এক রাখাল দাড়িয়ে আছে। আবু বকর ও ওমর ফারুক (রা.) রাখালকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি মুহাম্মাদ (সা.)-কে দেখেছ?
রাখাল উত্তরে বলল, আমি মুহাম্মাদ (সা.)-কে চিনি না এবং আপনাদেরও চিনি না। তবে ওই পাহাড়ের ওপরে একজন লোক ইয়া উম্মাতি, ইয়া উম্মাতি বলে কাঁদছেন।
আবু বকর ও ওমর ফারুকের (রা.) বুঝতে বাকি ছিলনা ওই লোক আর কেউ না দয়াল নবীজি হজরত মুহাম্মাদ (সা.)।
রাখাল আবার বলল লোকটির, সঙ্গে সঙ্গে আমার সব উট, ভেড়াগুলোও কাঁদতেছে আর খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আপনারা উনাকে নিয়ে যান। তা না হলে আমার সব উট, ভেড়াগুলো কাঁদতে কাঁদতে মরে যাবে।
আবু বকর ও ওমর ফারুক (রা.) পাহাড়ে গিয়ে দেখলেন দয়াল নবীজি (সা.) সেজদারত অবস্থায় ইয়া উম্মাতি, ইয়া উম্মাতি বলে কাঁদছেন।
নবীজির (সা.) কষ্টে আবু বকর (রা.) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! আমি আবু বকর ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে যত আমল করেছি সব আপনার উম্মাতকে দিয়ে দিলাম, আপনি দয়া করে মাথা উঠান। নবীজি (সা.) মাথা উঠায় না।
এবার ওমর ফারুক (রা.) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! আমি ওমর যে আপনার মাথা নিতে গিয়ে নিজের মাথা দিয়ে দিয়েছি সে আপনার উম্মাতের জন্য সব আমল দিয়ে দিলাম। নবীজি (সা.) মাথা উঠায় না।
আবু বকর (রা.) বললেন ওমর (রা.) কাজ হবে না রাসূলুল্লাহকে (সা.) একমাত্র ফাতিমা শান্ত করতে পারবে।
তারা দুইজন মদিনা দিকে ছুটছেন, পথে হজরত আলী (রা.) এর সঙ্গে দেখা। আবু বকর ও ওমর (রা.) বললেন সামনে গিয়ে লাভ নেই, রাসূলুল্লাহকে (সা.) শান্ত করতে ফাতিমাকে (রা.) লাগবে। এবার তিন জনে ফাতিমার (রা.) বাড়ির সামনে আসলেন আলী (রা.) ফাতিমাকে ডাক দিলেন, ফাতিমা বাইরে এসে স্বামীর চেহারা দেখে বললেন, আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন, তবে কি মক্কার মুনাফিকরা আমার আব্বাজানকে মেরে ফেলছে?
হজরত আলী (রা.) বললেন তুমি তাড়াতাড়ি চলো নবীজি (সা.) ইয়া উম্মাতি, ইয়া উম্মাতি বলে কাঁদছেন, মাথা উঠাচ্ছেন না।
ফাতিমা দৌড়ে গেলেন। নবীজির (সা.) কাছে গিয়ে বলছেন আব্বাজান আপনি সফরে যাবার আগে এবং সফর থেকে ফিরে প্রথমে আমাকে দেখতেন, আমার সঙ্গে কথা বলতেন। কিন্তু আজ তিন দিন হলো আপনার কোনো খোঁজ নেই, আপনি কি আমাকে ভুলে গেছেন?
নবীজি (সা.) তাও মাথা উঠায় না। ফাতিমা (রা.) বললেন, আব্বাজান আমি আপনার ফাতিমার সব নেকী আপনার উম্মাতিকে দিয়ে দিলাম। নবীজি (সা.) মাথা উঠায় না। নবীজির (সা.) দুই পাশে হাসান, হুসাইন (রা.) দাঁড়িয়ে বলতেছেন নানাজান উঠেন, নানাজান উঠেন। নবীজি (সা.) মাথা উঠায় না।
হঠাৎ ফাতিমা (রা.) বলে উঠলেন, ‘আব্বাজান আপনি উঠেন আমি আপনার উম্মাতির জন্য হাসান, হুসাইনকে কোরবানি করে দিলাম।’ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার! এবার নবীজি (সা.) মাথা উঠালেন আর বললেন ফাতিমা তুমি কি দোয়া করলা আমার আল্লাহ তোমার দোয়া কবুল করে ফেলছেন।