নতুন উৎপাদনে নয়, বিদ্যুৎ বিতরণে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন এখন আর বাড়ানোর প্রয়োজন নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বরং পুরনো কেন্দ্রগুলো সচল রেখে সঞ্চালন ও বিতরণে মনোযোগী হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের আগামী অর্থ বছরের বাজেট পর্যালোচনা করে তারা এই কথা বলছেন। বিদ্যুৎখাতের বাজেটে বিকল্প জ্বালানিতে বরাদ্দ রাখায় সাধুবাদ জানিয়েছেন কেউ কেউ। আবার অনেকে বলছেন, করোনার সময় অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ে প্রকল্প নেওয়া ঠিক হয়নি।
প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য ২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত অর্থ বছরে এই বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার ৫১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় এবার বরাদ্দ কমেছে এক হাজার ২৯৩ কোটি টাকা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, ‘বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ৭০ ভাগ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিতরণ ও সঞ্চালনের জন্য। আর বাকিটুকু চলমান প্রকল্পের জন্য। বিশেষ করে কয়লার তিন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এটি খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। তবে সরকারের উচিত বিদ্যুতের চাহিদার চলমান অবস্থা বিবেচনা করে খুব গুরুত্ব বুঝে প্রকল্প হাতে নেওয়া।’
তিনি বলেন, ‘১০/১৫ বছর নয়, পাঁচ বছর করে পরিকল্পনা চিন্তা করতে হবে। স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা আপাতত না করাই ভালো।’
গত বৃহস্পতিবার (১১ জুন) জাতীয় সংসদে বাজেটের লিখিত বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বিদ্যুতের ২০৪১ সাল পর্যন্ত মহাপরিকল্পনায় ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এখন যা সব মিলিয়ে ২৪ হাজার মেগাওয়াট। এখন পর্যন্ত দেশের ৯৬ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।’
এ বিষয়ে ম. তামিম বলেন, ‘বিশ্বের বহুদেশ কিছু বাড়তি বিদ্যুৎকেন্দ্র রাখে। তবে এটা ১০ শতাংশ হতে পারে। এর বেশি নয়। তিন চার হাজার মেগাওয়াট বসে থাকতে পারে। যাতে চাহিদা বাড়লে ব্যবহার করা যায়।’
বাজেটের বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই চাহিদা কমে গেছে। এখন যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা তা দিয়েই এই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে আরও বিদ্যুৎ উৎপাদন, আরও সঞ্চালন লাইন করার কোনও দরকার নেই। বরং যেগুলো আছে সেগুলোর সংস্কার করায় মনোযোগ দেওয়া উচিত। পরিচালনা ব্যয় নতুন করে নির্ধারণ করা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে বিদ্যুতে ঘাটতি পোষাতে এরইমধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। তাহলে উন্নয়ন বাজেটের পেছনে সময় না দিয়ে কী করে ঘাটতি কমানো যায় সেই চিন্তা করা উচিত। দাম না বাড়িয়ে কমানো যায় কিনা তাও বিবেচনা করা যেতে পারে।’