
পৃথিবীর কেন্দ্রে রহস্যজনক প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনি ভেসে আসছে পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে। চুপিচুপি বয়ে যাচ্ছে ভূ-তরঙ্গ। সিসমোগ্রাফ যন্ত্রে ধরা পড়েছে এক ধীর লয়ের কম্পন। কোথা থেকে আসছে এই প্রতিধ্বনি? হাজার হাজার ভূমিকম্পের তরঙ্গ প্রবাহ বিশ্লেষণ করে ভূতাত্ত্বিকরা জানতে পেরেছেন দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার নীচে রয়েছে এক অজানা, অচেনা গোপন কুঠুরি যেখান থেকেই ভেসে আসছে ওই প্রতিধ্বনি। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের মার্কেসিয়াস আগ্নেয় দ্বীপপুঞ্জের ঠিক নীচে ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৯০০ কিলোমিটার গভীরে একেবারে পৃথিবীর কেন্দ্র ও তাকে ঘিরে থাকা কঠিন আবরণের সীমানা ঘেঁষে রয়েছে এক বিরাট কাঠামো। এমন একটি এলাকা যার খোঁজ আগে কখনও পাওয়া যায়নি।
এই কাঠামোর ভৌত, রাসায়নিক গঠন কী, তার বৈশিষ্ট্যই বা কী, সেটা এখনও অজানা। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর কেন্দ্রে রয়েছে এমন একটি কাঠানো যা আকারে, আয়তনে বিশাল। যার পরিধি প্রায় এক হাজার কিলোমিটার এবং ২৫ কিলোমিটারের মতো পুরু। মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির ভূতাত্ত্বিক ডোয়েন কিম বলেছেন, ওই এলাকার নাম হল ‘আলট্রা-লো ভেলোসিটি জোন’। কারণ যে ভূকম্পন তরঙ্গ বা ভূ-তরঙ্গ বয়ে চলেছে ওই এলাকার মধ্যে দিয়ে তার গতিবেগ খুবই কম।
কীভাবে ওই ভূ-তরঙ্গ তৈরি হল সেটা এখনও রহস্য। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ওই এলাকার রাসায়নিক গঠন ও তাপমাত্রাও অনেকটাই আলাদা। পৃথিবীর ভেতরটা অনেকটা পেঁয়াজের খোলার মতো। পরতে পরতে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন স্তর। তাদের রাসায়নিক ও ভৌত গঠন, বৈশিষ্ট্য আলাদা। সবচেয়ে বাইরের স্তরটি রাসায়নিক গঠনগতভাবে ভিন্ন, নিরেট সিলিকেট ভূত্বক যার নীচে রয়েছে ম্যান্টল। একে বলে গুরুমণ্ডল। ভূত্বক এবং গুরুমণ্ডলের উপরের অংশকে একসঙ্গে বলে লিথোস্ফিয়ার। এই অংশেই টেকটনিক প্লেটগুলো সংকুচিত অবস্থায় থাকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, উপগ্রহ চিত্রে পৃথিবীর যে রূপ এখন আমরা দেখতে পাই তার সঙ্গে কোটি কোটি বছর আগের পৃথিবীর মিল নেই।
একটু একটু করে রূপ বদলাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই বদলের অন্যতম কারণ হচ্ছে এই টেকটনিক প্লেট ও তার নীচে পৃথিবীর গভীরে থাকা ম্যান্টল স্তরের চলাফেরা। গলিত ম্যান্টলের প্রবাহের ফলে তার উপরের টেকটনিক প্লেটগুলোর একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। কখনও মৃদু ধাক্কা আবার কখনও জোরদার ঠোকাঠুকি হয়ে প্লেটগুলো একে অপরের থেকে দূরে সরে যায়। কখনও বা একটি প্লেট অন্যটার ঘাড়ে উঠে যায়। এই ধাক্কাধাক্কির ফলেই ভূত্বকের পরিবর্তন হয়। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গী হয় ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত বা কখনও সুনামি। বিগত কয়েক দশক ধরে ম্যান্টলের গতিবিধি, টেকটনিক প্লেটগুলোর অবস্থান, সংঘর্ষের ফলে তৈরি শক্তিপ্রবাহ নিয়ে গবেষণা করছেন ভূবিজ্ঞানীরা।
- ট্যাগ:
- জটিল
- প্রকৃতি ও পরিবেশ
- পৃথিবীর কেন্দ্র