
সালামির আকাল, পুরাতন কাপড় ও সীমাহীন কষ্টের এক অন্যরকম ঈদ!
ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে স্বজন আর বন্ধুদের মিলনমেলা, হৈ-হুল্লোড় আর ঘুরে বেড়ানো। ঈদ মানে কোলাকুলি, করমর্দন। ঈদ মানে প্রতিবেশীদের নিয়ে খাওয়াদাওয়া, আড্ডা দেওয়া। নাড়ির টানে গ্রামে গিয়ে মা-বাবা, ভাই-বোনদের সঙ্গে একত্র হওয়া। নতুন জামাকাপড় পরা। কিন্তু এবারের করোনাকালের ঈদে সেই আনন্দের ছিটেফোটাও ছিল না।
ঢাকার ধানমণ্ডির বাসিন্দা লায়লা রুমিনা আক্তারের বাড়িতে প্রতিবছর ঈদের দুপুরে আত্মীয়স্বজনের বেড়াতে আসা নিয়মিত একটা ব্যাপার। সে জন্য ঈদের আগের দিন থেকেই তিনি রান্নাবান্না শুরু করেন। কিন্তু এই বছর তার বাড়িতে ঈদ এসেছে অন্যভাবে।
লায়লা রুমিনা বলেন, 'মনে হচ্ছে না কোন ঈদ কাটাচ্ছি। আত্মীয়স্বজন কেউ আসেনি, আমাদেরও কারো বাসায় যাওয়া হবে না। গত বছর এই দিনে বাসা ভর্তি মেহমান ছিল। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে যেন অন্যসব দিনের মতোই আজকের দিনটা। এতো কিছু রান্না করেছি, কিন্তু খাওয়ার লোক নেই।'
তিনি বলছেন, ঈদে যদি কেউ আসে, সেই ভেবে বরাবরের মতোই অনেক কিছু রান্না করেছেন। কিন্তু ঈদের দিনে দুপুরেও কেউ আসেনি, রাতেও আসার সম্ভাবনা নেই।
আরো অনেক পরিবারের ঈদ উদযাপনের গল্পটা একই রকম। করোনাকালে এই বছর আলাদা ধরনের এক ঈদুল ফিতর কাটাচ্ছেন বাংলাদেশের বাসিন্দারা। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে দুইমাস ধরে অঘোষিত লকডাউন চলছে। ঘরে বসে সবাইকে ঈদ উদযাপনের পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সোমবার পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৩৫ হাজার ৫৮৫ জন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এই রোগে ৫০১ জন মারা গেলেন।
রবিবার সন্ধ্যায়, ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে ঘরে থেকে ঈদ উদযাপনের আহ্বান জানান। সাথে সব ধরণের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'এ বছর আমরা সশরীরে পরস্পরের সাথে মিলিত হতে বা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে না পারলেও টেলিফোন বা ভার্চুয়াল মাধ্যমে আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর নেব।'
ঈদগাহ নয়, মসজিদে জামাত
ঈদের জামাত ঐতিহ্য অনুযায়ী ঈদগাহে অনুষ্ঠানের রেওয়াজ থাকলেও, প্রথমবারের মতো মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও অনেকে মসজিদের ঈদের জামাতেও অংশ নেননি। বেশ কয়েকটি মসজিদে খবর নিয়ে জানা গেছে, সেখানে একাধিক জামাতের আয়োজন করা হয়েছে, যাতে ভিড় বেশি না হয়। সবাইকে মাঝখানে অন্তত একফুট জায়গা রেখে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। মসজিদের পরিবর্তে অনেক ভবনের ছাদেও ঈদের জামাতের আয়োজন করতে দেখা গেছে।
সিরাজগঞ্জে শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছিলেন ঢাকার বাসিন্দা মিরাজ মওলা চৌধুরী। সেখানকার মসজিদে মাইকিং করা হয়েছে, ঢাকা বা নারায়ণগঞ্জ থেকে যারা এসেছেন, তারা যেন ঈদের জামাতে অংশ না নেন। এই কারণে মিরাজ চৌধুরীর এই বছর ঈদের জামাত পড়া হয়নি।
ঢাকার খিলগাঁয়ের বাসিন্দা আরিফুল হক অবশ্য নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মসজিদে নামাজ পড়তে যাননি। তিনি বলছেন, 'সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। মসজিদে গেলে সেই দূরত্ব কতটা রাখতে পারবো জানি না। সেসব চিন্তা করে আর বাসা থেকে বের হইনি। ঈদের দিনটা বাসাতেই কাটিয়ে দেবো।'
ঈদের জামাতের পর কোলাকুলি আর স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে বেড়ানোর মধ্য দিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির রেওয়াজ থাকলেও এবছর থাকছে না তেমন কোন আয়োজন। কাউকে কোলাকুলি করতে দেখা যায়নি। প্রায় সবাই মাস্ক ব্যবহার করছেন।