চীন ছাড়ছে সনি–টয়োটারা, ডাকছে বাংলাদেশ
জাপানের সনি করপোরেশনকে কে না চেনে। ক্যামেরা, টেলিভিশন, মুঠোফোনসহ বহু ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তৈরি করে সনি বিশ্বজুড়ে ঘরে ঘরে জায়গা করে নিয়েছে।
সনি এখন তাদের ক্যামেরা, প্রজেক্টর ও ভিডিও গেম খেলার প্লে স্টেশন তৈরির কারখানা চীন থেকে সরিয়ে অন্য কোনো দেশে নিতে চায়। শুধু সনি নয়, চীন থেকে তল্পিতল্পা গোটাতে আগ্রহী জাপানের গাড়ি উৎপাদনকারী টয়োটার যন্ত্রাংশ তৈরির কোম্পানি টয়োটা বশোকু করপোরেশন, ইলেকট্রনিক জায়ান্ট শার্প ও প্যানাসনিক, ঘড়ি উৎপাদনকারী সিকো ও ক্যাসিওর মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান।
জাপান চীন থেকে কারখানা সরিয়ে নিতে ২২০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ (প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা) একটি তহবিল গঠন করেছে। যেসব জাপানি কোম্পানি চীন ছাড়বে, তাদের সহায়তা দেওয়া হবে এই তহবিল থেকে। ৩৪টি জাপানি কোম্পানি ইতিমধ্যে কারখানা সরিয়ে চীন থেকে অন্য দেশে নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে বলে খবর এসেছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছে।
২০০৮ সালের পর থেকেই বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো চীনের পাশাপাশি অন্য কোনো দেশ থেকে পণ্য কেনার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছিল। নানা কারণে উৎস বৈচিত্র্যকরণ খুব একটা হয়নি। কিন্তু মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ যখন শুরু হলো, তখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২৫ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়ে চীন ছাড়ার তোড়জোড় বাড়ে। এবার করোনাভাইরাস দুর্যোগে নিরাপত্তা ও কৌশলগত কারণেই চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্য নিয়েছে জাপানিরা। আর যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসন তো অনেকটা চাপ প্রয়োগ করছে।
জাপানিরা কেন চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে চায়, তার একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায় যুক্তরাষ্ট্রের পামির কনসাল্টিং এলএলসি নামের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্সি এ কুয়োর একটি লেখায়। ৫ মে ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এ লেখায় তিনি উল্লেখ করেন, অনেক জাপানি কোম্পানিকে বিশ্বব্যাপী ও জাপানে জরুরি ও নিরাপত্তার দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য সরবরাহে পুরোপুরি চীনের ওপর নির্ভর করতে হয়। করোনা দেখিয়ে দিচ্ছে, শুধু একটি দেশের ওপর নির্ভরতা কী সংকট তৈরি করতে পারে।
মার্সি এ কুয়ো বলেন, ‘জাপানকে সেসব পণ্যের উৎস দেশে বৈচিত্র্য আনতেই হবে, যা তার স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য জরুরি। এটি চীনের জন্য উদ্বেগের। কারণ, জাপানের উদ্যোগ অন্য বিনিয়োগকারীদের বিচলিত করে তুলবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানিগুলো চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে মরিয়া। মার্কিন প্রশাসনও এ ক্ষেত্রে সক্রিয়। যেমন ১৬ মে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদলু এজেন্সির এক খবরে বলা হয়, ২৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেন। এরপরই ইন্দোনেশিয়া জাভায় চার হাজার হেক্টর জমি প্রস্তুত করা শুরু করেছে। চীনে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ উৎপাদকদের বেশির ভাগ ইন্দোনেশিয়ায় কারখানা সরিয়ে নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।