খাসোগির হত্যাকারীদের পরিবারের ক্ষমায় ক্ষিপ্ত প্রেমিকা
হত্যাকাণ্ডের শিকার সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির সন্তানরা তার বাবার হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দেয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই নিহতের তুর্কি বাগদত্তা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেছেন এমন ক্ষমা প্রদর্শনের অধিকার কারো নেই।
হাতিস চেংগিস টুইট করে বলেছেন, এ ধরণের জঘন্য হত্যাকাণ্ডের জন্য কখনই কেউ ক্ষমা পতে পারে না। সৌদি সরকারের সমালোচক খাসোগিকে ২০১৮ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসুলেটের মধ্যে হত্যা করা হয়।
সৌদি সরকার এবং রাজপরিবার দাবি করে আসছে এ হত্যাকাণ্ডের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই, বরঞ্চ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভেতরের কিছু লোক নিজের সিদ্ধান্তে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
তবে জাতিসঙ্ঘসহ অনেক দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই অজুহাত মেনে নেয়নি। তাদের সন্দেহ - সৌদি যুবরাজ মোহামেদ বিন সালমান নিজেই এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ-দাতা।
মৃত্যুর আগে জামাল খাসোগি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতেন এবং ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। এসব লেখার অনেকগুলোতেই সৌদি রাজপরিবারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা হয়েছে।
ইস্তাম্বুলে তার হত্যাকাণ্ডের পর তার লাপাত্তা হয়ে যাওয়া নিয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ নানারকম তত্ত্ব প্রচারের পর একসময় শিকার করে তাকে কনসুলেটের মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। তাকে দেশে নিয়ে আসার জন্য পাঠানো একটি গোয়েন্দা দল তাকে হত্যা করেছে।
গত বছর ডিসেম্বরে রিয়াদে এক গোপন বিচারকার্যের পর পাঁচজনকে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সেসময় জাতিসংঘের একজন র্যাপের্টিয়ার অ্যাগনেস কালামার্ড মন্তব্য করেছিলেন, “বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে।“
কী বলেছেন খাসোগজির বাগদত্তা?
শুক্রবার হাতিস চেংগিজ টুইটারে লেখেন, জামাল খাসোগি এখন একজন “আন্তর্জাতিক প্রতীক, তিনি আমাদের সবার ঊর্ধ্বে, ভালোবাসা এবং সম্মানের পাত্র তিনি।“ সুতরাং তার হত্যাকারীদের এভাবে ক্ষমা করে দেয়া যায় না।
চেংগিজ লেখেন, “তার বিয়ের জন্য কাগজপত্র আনতে গিয়ে জামাল তার দেশের কনসুলেটের মধ্যেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তাকে লোভ দেখিয়ে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। তাকে হত্যার জন্য সৌদি আরব থেকে লোক যায়।“
তিনি বলেন, জঘন্য এই হত্যাকাণ্ডের হোতাদের ক্ষমা করে দেয়ার অধিকার কারো নেই, এবং বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তিনি চুপ করবেন না।
কী বলছেন খাসোগির সন্তানরা?
সালাহ খাসোগজি নামে নিহত জামাল খাসোগির যে ছেলে জেদ্দায় থাকেন তার টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এক বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, “পবিত্র রমজানে মাসের পবিত্র রাতে আমরা সৃষ্টিকর্তার বাণী স্মরণ করছি :‘কেউ যদি ক্ষমা প্রদর্শন করে এবং মীমাংসা করে, আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করবেন।‘
“সুতরাং শহিদ জামাল খাসোগির পুত্ররা ঘোষণা করছি যে যারা আমাদের পিতাকে হত্যা করেছে তাদের আমরা ক্ষমা করে দিচ্ছি, এবং আল্লার সন্তুষ্টি কামনা করছি।“
ইসলামি শারিয়া আইনে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন যিনি তার নিকট পরিবার ক্ষমা করলে অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড রহিত করা যেতে পারে।
এর আগে সালাহ খাসোগি বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, সৌদি সরকারের তদন্তের ওপর তার আস্থা রয়েছে। অতীতে তিনি এমন বিবৃতিও দিয়েছেন যে তার বাবার মৃত্যুকে পুঁজি করে সৌদি আরবের বিরোধীরাণ্ডের সৌদি নেতৃত্বকে খাটো করতে চাইছে।
গত বছর ওয়াশিংটন পোস্টে রিপোর্ট বের হয়েছিল যে বাবার মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ হিসাবে জামাল খাসোগির সন্তানরা সৌদি সরকারের কাছ থেকে বাড়ি এবং মাসোহারা পাচ্ছেন।