খোলা ময়দানে ঈদের জামাত হচ্ছে না, তদারকি হবে কিভাবে
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে এবারের ঈদের নামাজ ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে বাড়ির কাছের মসজিদে গিয়ে আদায় করার জন্য অনুরোধ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
গত ১৪ই মে আলেম-ওলামাদের সঙ্গে বৈঠক করে ধর্ম মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্র জারি করে।
সেখানে মসজিদের ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যাপার এ সংক্রান্ত কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সেখানে জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো পরিহার করার জন্যও অনুরোধ করে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "বর্তমানে সারা বিশ্বসহ আমাদের দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিজনিত ওজরের কারণে মুসল্লিদের জীবনের ঝুঁকি বিবেচনা করে এ বছর ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে ঈদের নামাজের জামায়াত নিকটস্থ মসজিদে আদায় করার জন্য অনুরোধ করা হল। প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে।"
মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ ময়দান কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় কোন ঈদুল ফিতরের জামাত আয়োজন করা হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান জানান, কিশোরগঞ্জের স্থানীয় সাহেব বাড়ির বংশধর সৈয়দ আহমদ ১৮২৭ সালে প্রথমে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।
সে সময়ে তিনি পীর হিসেবে পরিচিত ছিলেন এর পরের বছর অর্থাৎ ১৮২৮ সালে এই মাঠের গোড়াপত্তন হয় এবং সৈয়দ আহমদ ওই বছর তার ইমামতিতে প্রথম ঈদের জামাত শুরু করেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় সাত একর জমির ওপর এ ঈদগাহটি বিস্তৃত করা হয়।
কথিত আছে পরবর্তীতে ঈসা খাঁর বংশধর দেওয়ান মান্নান দাদ মাঠের পরিধি বাড়ান।
মি. আখতারুজ্জামান বলেন, সৈয়দ আহমেদের বাবা সৈয়দ ইব্রাহীম ১৮শ শতকে ইয়েমেন থেকে ভারতবর্ষে এসেছিলেন।
তিনি ছিলেন বেশ ধর্মপরায়ণ এবং ভারতের ২৪ পরগনায় ইসলাম প্রচার করতেন। এছাড়া ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন বলে জানা গেছে।
পরে কিশোরগঞ্জে ধর্মপ্রচার করতে গিয়ে তিনি সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং সাহেব বাড়িতে একটি মাজার স্থাপন করেন। যা বড় পীরের মাজার নামে পরিচিত।
মাঠের নামকরণের বিষয়ে জনশ্রুতি আছে যে, এই মাঠে প্রথম ঈদের জামাতে ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়া লাখ মুসল্লির জমায়েত হয়েছিল।
সেই থেকে মাঠের নাম হয়ে যায় 'সোয়া লাখি মাঠ'। সেখান থেকে উচ্চারণের বিবর্তনে এই মাঠের নাম বদলে শোলাকিয়া হয়েছে।
জাতীয় তথ্য বাতায়ন অনুযায়ী অপর একটি ধারণা হচ্ছে, মোগল আমলে এখানে পরগনার রাজস্ব আদায়ের একটি অফিস ছিল। সেই অফিসের রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। জনশ্রুতি হচ্ছে, এটাও ''শোলাকিয়া'' নামকরণের উৎস হতে পারে।
গত কয়েক বছর ধরে এই মাঠে একসাথে তিন লাখেরও বেশি মানুষ ঈদের জামাতে অংশ নিয়ে আসছেন। জেলা ও জেলার বাইরে থেকে আসা লাখ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণের কারণে এই জামাত, ঈদের অন্যতম আকর্ষণ।
এবার ঐতিহাসিক এই ঈদগাহে ১৯৩তম ঈদুল ফিতরের বড় জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। অথচ এবারই প্রথম এখানে কোন জামাত অনুষ্ঠিত হবে না।