আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনীহা, আম্পানের প্রভাবে উত্তাল নদী (ভিডিও)
নানা ধরনের সমস্যার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে রাজি হচ্ছেন না উপকূলীয় এলাকার লোকজন। অনেক জায়গায় প্রশাসন তাদের বুঝিয়ে নিয়ে গেলেও কিছু সময় পর তারা বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। আম্পানের প্রভাবে এরইমধ্যে উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সেগুলো উত্তাল রয়েছে।
এছাড়া ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও কোথাও বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি করা হলো।বরিশাল ঘূর্ণিঝড় আম্পান উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করলেও বরিশালের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো মঙ্গলবার রাতে অবস্থানকারী বেশিরভাগ মানুষ তাদের বাড়ি ফিরে গেছেন। পায়রা ও মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে বাজানো হচ্ছে সাইরেন। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কেন্দ্রগুলোতে টানানো হয়েছে সাংকেতিক ৩ (তিন) পতাকা। তারপরও লোকজনর আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে রাজি নন।
অনেক আশ্রয়কেন্দ্রেই বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি, বাথরুমগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। রয়েছে খাদ্য সংকটও। সংকট সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে দাবি করেছেন বিভাগীয় কমিশনার ইয়ামিন চৌধুরী। তিনি বলেছেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় মানবিক সংকট সমাধানের চেষ্টা চলছে। বাড়ি ফিরে যাওয়া লোকজনকে আবারও আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকার নদীর পানি বেড়েছে। নিমাঞ্চল ও চরাঞ্চলে জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫-২০ ফিট উচু জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। আগে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করা হলেও বুধবার সকাল থেকে মাইকিংয়ের পাশাপাশি বিপদ সংকেত ‘সাইরেন’ বাজানো হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) প্রতিটি কেন্দ্রে ২ পতাকার স্থলে ৩ পতাকা টানিয়ে বিপদ সংকেতের বার্তা দেওয়া হচ্ছে জনগণকে।
ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে জানমাল রক্ষায় মঙ্গলবার রাতে বিভাগের প্রায় ৬ হাজার আশ্রয়কেন্দ্রে ১০ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিলেও বুধবার সকালের দিকে আবহাওয়া মোটামুটি ভালো থাকায় তারা অনেকেই বাড়ি ফিরে গেছেন। এই মানুষগুলাকে ফের আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরিয়ে আনার এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন সিপিপি’র বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক আব্দুর রশীদ। সাইরেন বাজিয়ে ও পতাকা টানিয়ে মহাবিপদ সংকেত জনগণের মাঝে প্রচার করে তাদের সচেতন করছে সিপিপি কর্মীরা।
এদিকে, মঙ্গলবার রাতে বরগুনায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৭০ বছর বয়সের এক ব্যক্তির মৃতু হয়েছে।বুধবার সকল ৯টা পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের প্রায় ৬ হাজার আশ্রয় কেন্দ্রে ১০ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আরও কিছু মানুষকে তাদের গবাদি পশুসহ আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে দাবি বিভাগীয় কমিশনারের।স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সকাল থেকে দফায় দফায় বৃষ্টি হলেও মাঝে মধ্যেই সূর্য উঁকি দিচ্ছে।
ভোলা ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে ভোলা সংলগ্ন মেঘনা, তেতুলিয়া নদী উত্তাল রয়েছে। পানির উচ্চতা বেড়েছে কয়েক ফুট। অতিরিক্ত জোয়ারে জেলার নিম্নাঞ্চল কয়েক ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে পুরো জেলায় দমকা বাতাসসহ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। জেলার ২১ চরের লোকজনকে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে।
তাছাড়া মূল ভূখণ্ডের মানুষও আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনকে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভোলা জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম সিদ্দিক আশ্রয়কেন্দ্র সমূহ পরিদর্শন করেছেন।ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ভোলা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১১০৪ চারটি সাইক্লোন সেল্টার খোলা রয়েছে।
এছাড়া ৯২টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।উপকূলীয় এলাকায় সকর্তামূলক প্রচার চালাচ্ছের সিপিপি সদস্যরা। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নৌ বাহিনী, নৌ পুলিশ, জেলা পুলিশ ও কোস্টগার্ড লোকজনকে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে সহায়তা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে সাইক্লোন সেল্টারে আসা লোকজনকে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে বলা হচ্ছে।ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান, ঘূর্ণিঝড়ে সাবাইকে সতর্ক করার পাশাপাশি নিরাপদে আসতে সিপিপি ও রেডক্রিসেন্টের ১০ হাজার ২০০ সেচ্ছাসেবী কাজ করেছে এছাড়াও আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা ছাড়াও নগদ টাকা, শুকনো খাবার ও শিশু খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।পিরোজপুরপিরোজপুরের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৬৫ হাজার ২২০ জন আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে, বুধবার সকাল থেকে পিরোজপুরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মাঝের চরে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে।ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাঝের চরের বেড়িবাঁধের দক্ষিণ পশ্চিম অংশের ১০০ ফুট ভেঙে পানি ঢুকেছে। এতে ৬০-৬৫ একর জমিতে থাকা মিষ্টি আলু, চুনাকুমড়া, মরিচ, মিষ্টি কুমড়ার ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক সবজি ভেসে গেছে। মাঝের চরে থাকা লোকজনের মধ্যে বেশিরভাগ লোক আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উর্মি ভৌমিক ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনে গেছেন।
তিনি বলেন, এ চরে থাকা বৃদ্ধ ও শিশুদের সরিয়ে মঠবাড়িয়া প্রান্তে এনে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রায় ৫৫ হাজার লোককে বিভিন্ন উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে এনে রাখা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজনকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।মোংলা১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতেও মধ্যেই মোংলায় জনমনে আতঙ্ক নেই।
ভোর থেকে থেমে ভারী বৃষ্টিপাত হলেও বাতাসের তীব্রতা নেই তেম। নদীতে স্বাভাবিকের চাইতে তিন থেকে চার ফুট পানি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদুজ্জামান। তার মধ্যেই বুধবার সকাল থেকেই দোকানিরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।এদিকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো লোকজনকে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে।