অজয় রায় আর নেই

মানবজমিন প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অজয় রায় আর নেই। একুশে পদক প্রাপ্ত এই ব্যক্তিত্ব গতকাল ৮৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ২০১৫ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি অমর একুশের গ্রন্থমেলা থেকে বেরিয়ে উগ্রপন্থিদের আক্রমণে মারা যান অজয় রায়ের ছেলে অভিজিৎ রায়। এ ঘটনায় মামলা করেছিলেন অধ্যাপক অজয় রায়। আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন ২৮শে অক্টোবর। তবে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যাওয়া হলো না তার। জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ২৫শে নভেম্বর বারডেমে ভর্তি হন তিনি। গতকাল দুপুরে বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল তাকে। অধ্যাপক অজয় রায় ১৯৩৫ সালের ১লা মার্চ দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানেই বিদ্যালয় এবং কলেজ জীবন শেষ করে ১৯৫৭ সালে এমএসসি পাশ করে যোগ দেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। এরপর ১৯৫৯ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের লীডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি এবং পরের বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়েই করেন পোস্ট ডক্টরেট। অধ্যাপক অজয় রায় স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নৃশংস গণহত্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসস্থল ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। তিনি প্রথমে কুমিল্লার সোনামুড়া বর্ডারে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। অংশ নেন একাধিক অপারেশনে। তিনি পরবর্তীকালে আগরতলা হয়ে কলকাতায় গমন করেন। অজয় রায় সেখানে মুজিবনগর সরকারের পরিকল্পনা সেলের সদস্য হিসেবে নিয়োজিত হন। একাত্তরের মে মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ভারতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেন। সেখানে তার কাজ ছিল বাংলাদেশে থেকে আগত শিক্ষকদের মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধকরণ।বাংলাদেশে বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। ঢাবি থেকে অবসর নেয়ার পর তিনি বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চ গড়ে তোলেন। তিনি মুক্তমনার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির জন্মলগ্ন থেকেই কাজ করেছেন। আবার তিনি ছিলেন মুক্তান্বেষা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। পত্রিকাটির লক্ষ্য ছিল সমাজে যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানমনস্ততা এবং মানবকল্যাণবোধ প্রতিষ্ঠা করা।অধ্যাপক অজয় রায় একাধিক বই রচনা করেন। এরমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ‘বিজ্ঞান ও দর্শন, জড়ের সন্ধানে’, ‘আদি বাঙালি: নৃতাত্ত্বিক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ’, ‘বাংলা একাডেমি বিজ্ঞানকোষ (প্রথম হতে পঞ্চম খণ্ড)’ ইত্যাদি।স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি পদে আসীন ছিলেন। তিনি বর্তমানে সমপ্রীতি মঞ্চের সভাপতি, বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং এশিয়াটিক সোসাইটির বিজ্ঞান বিভাগের সম্পাদক, শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি এবং দক্ষিণ এশীয় মৌলবাদ ও সামপ্রদায়িকতা বিরোধী সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।তিনি অর্জন করেন, একুশে পদক (২০১২), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০১১), এশিয়াটিক সোসাইটির ফেলোশিপ (২০০৯), বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ (২০০৮), ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অফ ম্যাথেমাটিকাল ফিজিক্স অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স কর্তৃক সম্মাননাসহ আরো অনেক পদক ও সম্মাননা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরের পর বিশ্ববিদ্যালয়টির ইউজিসি অধ্যাপকও ছিলেন তিনি।অধ্যাপক অজয় রায়ের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শোকবার্তায় অধ্যাপক অজয় রায়ের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এছাড়াও তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন, বিভিন্ন সংগঠনসহ নানান ব্যক্তিবর্গ। তার ছোট ছেলে অনুজিৎ রায় জানিয়েছেন, অজয় রায় হাসপাতালে দেহ দান করে গেছেন। আজ সকাল ১১ টায় অধ্যাপক অজয় রায়ের লাশ সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য রাখা হবে কেদ্রীয় শহীদ মিনারে। এরপর জগন্নাথ হলে কিছুসময় রাখার পর তার লাশ নিয়ে যাওয়া হবে আবার বারডেমে। সেখানেই তার লাশ চিকিৎসা বিজ্ঞাণের গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও